logo
ads

ইউরোপের হারানো মহিমা ফিরে পেল নরউইচ ক্যাসেল কিপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশকাল: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২০ এ.এম
ইউরোপের হারানো মহিমা ফিরে পেল নরউইচ ক্যাসেল কিপ

সংগৃহীত

ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়ার আকাশে ভাসছে ইতিহাসের গম্ভীর প্রতিধ্বনি। নরউইচ শহরের হৃদয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ৯০০ বছরের পুরনো নরউইচ ক্যাসেল কিপ যেন আবারও জীবন্ত হয়ে উঠেছে। পাঁচ বছরের দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল পুনরুদ্ধারের পর এই মধ্যযুগীয় দুর্গটি আগস্ট ২০২৫-এ নতুন আঙ্গিকে খুলে দেওয়া হয়েছে পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য।

অতীতের ছায়া, বর্তমানের আলো
উইলিয়াম দ্য কনকোয়েরর যখন ১২শ শতকে দুর্গটির ভিত্তি স্থাপন করেন, তখন এটি ছিল নরম্যান শাসনের ক্ষমতার প্রতীক। ফ্রান্সের নর্মান্ডি থেকে আনা কেন চুনাপাথরে নির্মিত এই দুর্গটি শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, বরং ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। বাইউ ট্যাপেস্ট্রির পাতায় যার প্রতিচ্ছবি দেখা যায়, সেই দুর্গ আজও টিকে আছে সময়ের পরীক্ষায়।

নতুন প্রাণে জেগে ওঠা দুর্গ
৩৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পুনরুদ্ধারের পর এখন দুর্গের প্রতিটি তলা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। শতাব্দীর পর শতাব্দী যেসব দরজা কেবল কল্পনায় খোলা ছিল, সেগুলো আজ বাস্তবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছে পর্যটকদের। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সহযোগিতায় এখানে গড়ে তোলা হয়েছে লন্ডনের বাইরে প্রথম মধ্যযুগীয় গ্যালারি। ৯০০-এরও বেশি নরম্যান প্রত্নবস্তু সাজানো হয়েছে সেখানে—তলোয়ার, অলংকার, মুদ্রা কিংবা দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রী—যা দর্শককে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে প্রাচীন সভ্যতার জগতে।

শুধু দেয়াল নয়, গল্পের ভান্ডার
নরউইচ ক্যাসেল কিপ শুধু পাথরের দেয়াল নয়, এটি গল্পের ভান্ডার। প্রতিটি ইট, প্রতিটি করিডোরে লুকিয়ে আছে নরম্যানদের জীবনযাত্রা, তাদের রাজনীতি, তাদের যুদ্ধজয়ের কাহিনি। দুর্গের ভেতরে দাঁড়ালে মনে হয় যেন সময়ের স্রোত উল্টে যাচ্ছে—আজকের ২০২৫ নয়, বরং ১১০০ সালের ইউরোপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমরা।

পর্যটনে নতুন দিগন্ত
লোনলি প্ল্যানেটের ২০২৫ সালের শীর্ষ ভ্রমণস্থানের তালিকায় ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়ার নাম ওঠা কাকতালীয় নয়। লন্ডন থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত এই দুর্গ পর্যটকদের ভিড় টানছে প্রতিদিন। শুধু ইতিহাসপ্রেমী নয়, পরিবার, শিক্ষার্থী, এমনকি সাধারণ ভ্রমণপিপাসুরাও খুঁজে পাচ্ছেন নতুন অভিজ্ঞতা। এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় অর্থনীতিতেও—হোটেল, রেস্তোরাঁ, স্থানীয় দোকানগুলো নতুন প্রাণ পাচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিকচিন্তা
যদিও কোনো নির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নরউইচ ক্যাসেল কিপ এখন ইউরোপের সাংস্কৃতিক ভ্রমণের মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এর পুনরুদ্ঘাটন শুধু একটি দুর্গ নয়, বরং একটি যুগকে নতুন করে আবিষ্কার করার সুযোগ এনে দিয়েছে।

এক সময় নরম্যান শক্তির প্রতীক এই দুর্গ আজ মানব সভ্যতার স্থায়িত্ব ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বার্তাবাহক। ইতিহাসের এই পুনর্জাগরণ প্রমাণ করে—সময়ের ধুলো যতই জমুক না কেন, অতীতকে নতুন করে জাগিয়ে তোলা সবসময় সম্ভব।

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ