প্রকৃতির বিস্ময়কর এক ঘটনায় সবাইকে অবাক করে দিয়েছে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরকরণশী গ্রাম। মাত্র ১৭ দিনের একটি বাছুর জন্মের প্রথম দিন থেকেই দুধ দিতে শুরু করেছে। গাভির মালিক মো. হারুন অর রশিদ জানান, দুই বছর আগে ৭৫ হাজার টাকায় কেনা তাদের গাভি সম্প্রতি এই বাছুরটির জন্ম দিয়েছে। অবিশ্বাস্যভাবে, এই নবজাতক বাছুরও তার মায়ের পাশাপাশি দুধ দিচ্ছে। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হারুনের বাড়িতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ভিড় জমছে।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মিজানুর রহমান বলেন, “জীবনে এমন ঘটনা প্রথম দেখলাম। মা গাভি ও বাছুর একসঙ্গে দুধ দিচ্ছে, এটা একেবারেই অবিশ্বাস্য।” করিমগঞ্জ উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এমএমএ আউয়াল তালুকদার জানান, এটি একটি বিরল ঘটনা। তিনি বলেন, “মিল্কবিট লেয়ার হরমোনের অস্বাভাবিক সক্রিয়তার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষার দাবি রাখে।” প্রাণিসম্পদ দপ্তর ইতোমধ্যে বাছুর ও মা গাভির স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধানে একটি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। দুধটি মানুষের খাওয়ার উপযোগী ও পুষ্টিমানসম্পন্ন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে বরিশালে (২০২২) একটি গরু প্রসব ছাড়াই দিনে ৬ লিটার দুধ দিতে শুরু করে, যা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে হরমোনাল পরিবর্তনের ফল বলে উল্লেখ করেন।
একইভাবে, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গড়গোবিন্দপুর গ্রামের খোরশেদ আলম বলেন, ‘বকনার দুধ নিয়ে বিপদেই পড়েছিলাম। অন্যদিকে পাশের গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ১৫ দিনের বাছুরটি মায়ের দুধ না পেয়ে কাহিল হয়ে পড়েছিল। বাছুরটি আগামী ৬ মাস বকনার দুধ খেতে পারলে তার মূল্য হবে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।’
নাটোরে (২০১৭) একটি ২ বছর বয়সী বকনা গরু, যিনি এখনো প্রসব করেননি, তিনি দিনে আড়াই লিটার দুধ দিতে শুরু করেন। এই ঘটনাও স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করে এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে (২০১০-২০২০), বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে, নবজাতক বাছুর বা প্রসব না হওয়া গরুর দুধ উৎপাদনের খবর পাওয়া গেছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ১ মাসের বাছুর দুধ দিয়েছিল, যা বিজ্ঞানীরা ‘প্রিম্যাচিউর ল্যাকটেশন’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এটি হরমোনের অস্বাভাবিক ক্রিয়ার ফল।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে পরীক্ষাগারে এমন কিছু কেস লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে নবজাতক বাছুরে কোলোস্ট্রাম-জনিত হরমোন সক্রিয় হয়ে দুধ উৎপাদন শুরু হয়। তবে এটি স্বাভাবিক নয় এবং প্রায়ই স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
এ ধরনের ঘটনা বিশ্বজুড়ে বিরল হলেও হরমোনাল অস্বাভাবিকতার কারণে সম্ভব। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেন, এমন বাছুরের দুধ খাওয়ার আগে এর পুষ্টিমান ও নিরাপত্তা পরীক্ষা করা জরুরি। কিশোরগঞ্জের এই ঘটনা প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালের আরেকটি উদাহরণ, যা স্থানীয় ও বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের চূড়ান্ত প্রতিবেদন এই রহস্যের আরও ব্যাখ্যা দিতে পারে।
(সূত্র: USDA ARS, ScienceDirect)

