logo
ads

বিলুপ্তির পথে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী : বিশ্বে ১০ জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥

প্রকাশকাল: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১৫ পি.এম
বিলুপ্তির পথে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী : বিশ্বে ১০ জাতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে

সংগৃহীত

বিশ্বায়ন, আধুনিকায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের যুগে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে বিশ্বের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো। প্রাচীন ইতিহাস, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা বহন করা এসব জাতিগোষ্ঠী এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি দুই সপ্তাহে একটি করে স্থানীয় ভাষা চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে অগণিত জাতিগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয়ও।

নৃবিজ্ঞানীদের মতে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর বিলুপ্তি মানে কেবল কিছু মানুষের হারিয়ে যাওয়া নয়; বরং হারিয়ে যাওয়া একটি প্রাচীন জ্ঞানব্যবস্থা, প্রথা ও জীবনদর্শন।

নিচে বিশ্বের এমন ১০টি বিলুপ্তপ্রায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অবস্থা তুলে ধরা হলো—
১. আকা (Aka) – কঙ্গো অববাহিকা, আফ্রিকা
আফ্রিকার মধ্যাঞ্চলের আকা জনগোষ্ঠী মূলত শিকারি ও সংগ্রাহক। বন উজাড়, শিকার আইন কঠোর হওয়া এবং বহিরাগত বসতি স্থাপনের কারণে তাদের ঐতিহ্য হারাচ্ছে। বর্তমানে জনসংখ্যা কয়েক হাজারে নেমে এসেছে।

২. বেয়ার (Beyor) – ভারতের অরুণাচল প্রদেশ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী বেয়ার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বর্তমানে কয়েকশ’ মাত্র। তরুণ প্রজন্ম নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির পরিবর্তে মূলধারায় চলে যাওয়ায় এই জনগোষ্ঠী টিকে থাকার লড়াই করছে।

৩. তাসমানিয়ান আদিবাসী (Tasmanian Aboriginals) – অস্ট্রেলিয়া
ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের আগ্রাসনে ১৯শ শতকে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় তাসমানিয়ান আদিবাসীরা। বর্তমানে তাদের কিছু বংশধর বেঁচে থাকলেও নিজস্ব ভাষা ও সাংস্কৃতিক রীতি অনেকটাই বিলুপ্ত।

৪. ওনগে (Onge) – আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, ভারত
ওনগে জনগোষ্ঠী আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের আদি বাসিন্দা। আধুনিক রোগব্যাধি ও বহিরাগত প্রভাবের কারণে তাদের জনসংখ্যা এখন শতক অতিক্রম করে না।

৫. ইয়াঘান (Yaghan) – দক্ষিণ আমেরিকা
চিলি ও আর্জেন্টিনার দক্ষিণ প্রান্তে একসময় সমৃদ্ধ ছিল ইয়াঘান জনগোষ্ঠী। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েক ডজন মানুষ তাদের বংশ পরিচয় বহন করছেন। ভাষা ও সংস্কৃতি প্রায় পুরোপুরি হারিয়ে গেছে।

৬. ইয়ানোমামি (Yanomami) – অ্যামাজন, ব্রাজিল ও ভেনেজুয়েলা
অ্যামাজনের গভীর অরণ্যে বসবাসকারী ইয়ানোমামি জাতিগোষ্ঠী বহিরাগত খনি শ্রমিক, ভূমি দখলদার ও রোগ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে সংকটে পড়েছে। প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ থাকলেও ক্রমেই তারা সাংস্কৃতিকভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

৭. কালাশ (Kalash) – পাকিস্তান
চিত্রালের পাহাড়ি উপত্যকায় বসবাসরত কালাশ জনগোষ্ঠী তাদের প্রাচীন ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। তবে ধর্মীয় চাপ, বিয়ে ও মিশ্র সংস্কৃতির কারণে তাদের সংখ্যা দ্রুত কমছে। বর্তমানে সংখ্যা ৪ হাজারেরও কম।

৮. সান (San) বা বুশম্যান – দক্ষিণ আফ্রিকা
আফ্রিকার প্রাচীনতম শিকারি জনগোষ্ঠী সান। একসময় মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত থাকলেও এখন তারা সীমিত এলাকায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আধুনিক সভ্যতা, ভূমি হারানো এবং বাণিজ্যিক শিকার আইন তাদের অস্তিত্ব হুমকিতে ফেলেছে।

৯. চুকচি (Chukchi) – সাইবেরিয়া, রাশিয়া
রেইনডিয়ার পালক ও শিকারি চুকচি জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে সাইবেরিয়ায় বসবাস করছে। কঠিন আবহাওয়া, শিল্পায়ন ও রুশ সমাজের প্রভাব তাদের ঐতিহ্য ধ্বংস করছে।

১০. ম্রো (Mro) – বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠী জমি হারানো, দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব ও বহিরাগত প্রভাবের কারণে দ্রুত সংখ্যা হারাচ্ছে। স্থানীয় সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এদের সংখ্যা কয়েক হাজারে নেমে এসেছে।

মানববিদরা সতর্ক করেছেন, এই জনগোষ্ঠীগুলোকে রক্ষা করা না গেলে মানবজাতি একটি অমূল্য সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার চিরতরে হারাবে। তাদের ভাষা, গান, লোককথা, চিকিৎসা ও প্রকৃতিনির্ভর জ্ঞান হারিয়ে গেলে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না।

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ