logo
ads

গানের মায়াজালের পিছনে লুকিয়ে ছিল অত্যাচারের ছায়া: কুমার শানুর স্ত্রী রীতার বিস্ফোরক উন্মোচন

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশকাল: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:০৮ পি.এম
গানের মায়াজালের পিছনে লুকিয়ে ছিল অত্যাচারের ছায়া: কুমার শানুর স্ত্রী রীতার বিস্ফোরক উন্মোচন

সংগৃহীত

বলিউডের কিংবদন্তি প্লেব্যাক সিঙ্গার কুমার শানু, যাঁর গলার জাদু 'আশিকি' থেকে 'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে' পর্যন্ত দর্শকদের মন জয় করেছে, ব্যক্তিগত জীবনে কখনোই শান্তি খুঁজে পাননি। সম্প্রতি তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী রীতা ভট্টাচার্যের এক সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত অভিযোগগুলো সেই অতীতকে নতুন করে আলোকিত করেছে। 'ফিল্ম উইন্ডো'-র সঙ্গে কথোপকথনে রীতা জানিয়েছেন, তৃতীয় সন্তান জান কুমার শানুর গর্ভকালে তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চরমে পৌঁছায়। খাবারের অভাব, বাইরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং এমনকি আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়া—এসবের মধ্য দিয়ে গেছে রীতা, যখন শানু 'আশিকি'-র সাফল্যে ডুবে যাচ্ছিলেন। এই উন্মোচন শুধু তাঁদের বিচ্ছেদের কারণগুলো তুলে ধরেনি, বরং বিনোদন জগতের উজ্জ্বলতার পিছনে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারও প্রকাশ করেছে।

গানের উত্থান: শানুর সাফল্যের পথে রীতার অবদান
কুমার শানু, আসল নাম কেদারনাথ ভট্টাচার্য, ১৯৫০ সালের ২০ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বাঙালি পরিবারে বেড়ে ওঠা এই গায়কের প্রথম দিকের জীবন ছিল সংগ্রামময়। কলকাতায় বিভিন্ন চাকরিতে কাজ করার পাশাপাশি গানের অনুশীলন চালিয়ে যান তিনি। ১৯৮০-এর দশকে মুম্বাইয়ে আসার পর 'আশিকি' (১৯৯০) ছবির গানগুলো তাঁকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দেয়। 'সোনী সোনী' থেকে 'নজর কে কি রেহনি'—এই গানগুলোতে তাঁর গলা এমনভাবে মিলে যায় যে, তিনি 'রোমান্টিক ভয়েস অফ দ্য ইয়ার' নামে পরিচিত হন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে একদিনে ২৮টি গান রেকর্ড করার রেকর্ডও তাঁর নামে। ৯০-এর দশকে তিনি বলিউডের সবচেয়ে ব্যস্ত গায়ক ছিলেন, যা তাঁর পারিশ্রমিককে লক্ষ লক্ষ টাকায় নিয়ে যায়।
এই সাফল্যের পিছনে রীতা ভট্টাচার্যের অবদান অস্বীকার্য। কলকাতায় পরিচয়ের পর রীতা মুম্বাইয়ে শানুকে সঙ্গ দেন। ১৯৮৪ সালে (কিছু সূত্রে ১৯৮৬) পরিবারের সম্মতি ছাড়াই তাঁদের বিয়ে হয়। রীতা বলেন, "আমি তাঁকে সংগ্রামের দিনগুলোতে প্ররোচিত করেছি। মুম্বাইয়ে গিয়ে আমরা ফ্যান ছাড়া মেঝেতে ঘুমাতাম। আমি তাঁকে কাজের জন্য ঠেলে দিতাম।" তাঁদের তিন ছেলে—জিকো, জাসি এবং জান কুমার শানু। কিন্তু 'আশিকি'-র পর শানুর আচরণ বদলে যায়। রীতা বলেন, "সাফল্য এলে তিনি অভদ্র হয়ে ওঠেন। টাকা আসত, কিন্তু আমাদের জীবন আরও কঠিন হয়।" এই পরিবর্তন তাঁদের সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তোলে, এবং ১৯৯৪ সালে বিচ্ছেদ হয়।

অন্ধকার অধ্যায়: গর্ভকালীন অত্যাচারের কঠিন সত্য
রীতার সবচেয়ে বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা ছিল জানের গর্ভধারণের সময়। তখন তিনি শুধুমাত্র শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাননি, পরিবারের অত্যাচারও সহ্য করেছেন। সাক্ষাৎকারে রীতা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "অন্তঃসত্ত্বায় আমি খেতে পাইনি। রান্নাঘরে তালা দিয়ে রাখা হতো। বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা নিষিদ্ধ। সাজগোজ করতে পারতাম না। শুধু জা (শানুর বোন) পাশে থাকতেন, কিন্তু তিনিও অত্যাচারে যোগ দিতেন।" শানুর বোন নিজের স্বামী-সন্তান ফেলে এসে তাঁদের সঙ্গে থাকতেন এবং শানুরই ঘরে ঘুমাতেন, যখন রীতা ছেলেদের সঙ্গে আলাদা ঘরে।খাবারের অভাব ছিল সবচেয়ে কঠিন। রীতা বলেন, "তারা বাইরে যেতে গেলে রান্নাঘর লক করে দিত। আমি এক মুঠো চাল কিনে রেখেছিলাম। জার রান্নাঘরে গিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খেতাম। শিশুর খাবার কিনতে গেলে দোকানবালা বলত, পরিবার থেকে নিষেধ। দুধ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তারকে বলা হতো, টাকা দেব না। প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়তাম।" এই সময়ে শানুর এক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কও চলছিল, যা কুনিকা সদানন্দের সঙ্গে। কুনিকা সম্প্রতি 'বিগ বস ১৯'-এ স্বীকার করেছেন, "আমাদের সম্পর্ক ছিল টক্সিক। রীতা আমার গাড়ি হকি স্টিক দিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন।" কিন্তু শানু তখন রীতাকে আদালতে টেনে নিয়ে যান, অভিযোগ করে 'অত্যাচার' করছেন। রীতা বলেন, "আমি তখন খুব ছোট, পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল। পরিবার চমকে গেল। এক বছর আগে তিনি পার্টিতে বলেছিলেন, আমার অবদানেই তাঁর সাফল্য। কিন্তু কেন বিচ্ছেদ, তা জিজ্ঞাসা করার সুযোগও পাইনি।" এই অভিযোগগুলো শানুর পরিবারকে 'অমানুষিক' বলে অভিহিত করে, যা সমাজে নারীদের উপর পরিবারের নিয়ন্ত্রণের এক উদাহরণ।

বিচ্ছেদের পরিণতি: ছেলেদের জীবনে অনুপস্থিতির ছাপ
১৯৯৪ সালের বিচ্ছেদের পর শানু দ্বিতীয় বিয়ে করেন সালোনি ভট্টাচার্যের সঙ্গে, যাঁদের দুই কন্যা—শ্যানন কে এবং অ্যানাবেল কুমার শানু। কিন্তু প্রথম স্ত্রীর ছেলেরা তাঁর থেকে দূরে থেকে বড় হয়। বিশেষ করে জান কুমার শানু, যিনি ২০২০ সালে 'বিগ বস ১৪'-এ অংশ নিয়ে বাবার সঙ্গে সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। জান বলেন, "মা গর্ভে আমাকে নিয়ে ছয় মাসের সময় বাবা চলে যান। আমরা তিন ভাই মাকে কেন্দ্র করে বড় হয়েছি। বাবা কখনো জীবনে ছিলেন না। কেন আমাকে সাপোর্ট করেননি, তা জিজ্ঞাসা করুন তাঁকে।" জানের মতে, বাবার নাম ছাড়া তিনি কিছু পাননি; সবকিছু মায়ের কঠোর পরিশ্রমে। 'বিগ বস'-এ জানের মারাঠি ভাষা নিয়ে মন্তব্যের পর শানু ভিডিওতে ক্ষমা চেয়ে ছেলের 'উপবর্ধন' নিয়ে প্রশ্ন তুললে জান বলেন, "সলমান স্যার আমার উপবর্ধনের প্রশংসা করেছেন। বাবা কেন এমন বললেন, বুঝি না।"
জিকো এবং জাসির সঙ্গেও শানুর সম্পর্ক ঠান্ডা। জিকোর বিয়েতে শানু উপস্থিত ছিলেন না। জান বলেন, "বাবা আমাদের থেকে দূরে থেকে গানের জগতে মগ্ন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আমার বাবা, কথা হয়ে যাবে।" এই দূরত্ব রীতাকে একা করে তোলে, যিনি ছেলেদের একাই লালন করেছেন। সম্প্রতি জান সোশ্যাল মিডিয়ায় কুনিকার ছেলের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাবার অতীতকে ইঙ্গিত করেছেন।

পর্দার আলো vs বাস্তবের ছায়া: এক অসমাপ্ত গল্প
কুমার শানুর জীবন যেন একটা দ্বৈততা—পর্দায় রোমান্টিক গানের রাজা, ব্যক্তিগত জীবনে বিচ্ছেদ এবং অভিযোগের ঘেরাটোপ। রীতার উন্মোচন শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি দেখায় কীভাবে সাফল্য সম্পর্ককে ধ্বংস করতে পারে। শানু এখনও কোনো সাড়া দেননি, কিন্তু এই ঘটনা বিনোদন জগতের নারীদের যন্ত্রণাকে সামনে নিয়ে এসেছে। রীতা বলেন, "আজও জানি না কেন এমন হলো। কিন্তু আমি আমার ছেলেদের জন্য লড়াই করেছি।" জানের মতো তরুণরা এখন নিজেদের পথ খুঁজছেন, কিন্তু অতীতের ক্ষত রয়ে গেছে। এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, গানের সুরের পিছনে কতটা যন্ত্রণা লুকিয়ে থাকতে পারে।


 

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ