logo
ads

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, এখন দেয়ালের ছায়ায় বন্দী: এক অবহেলার কান্না

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৬ পি.এম
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, এখন দেয়ালের ছায়ায় বন্দী: এক অবহেলার কান্না

নিজস্ব

হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই '৭১-এর গুলির শব্দ, রক্তাক্ত মাটির গন্ধ, আর স্বাধীনতার জয়ধ্বনি—এসব যেন আজ একটি ভাস্কর্যে জড়িয়ে উঠেছে, কিন্তু সেই ভাস্কর্যটি এখন দেয়ালের কারাগারে বন্দী। জয়পুরহাটের পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে "প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ '৭১" নামের এই স্মৃতিচিহ্ন, যা কোনোদিন ছিল নান্দনিকতার আলোর মতো উজ্জ্বল, আজ অবহেলার ছায়ায় ঢাকা। রং উঠে গেছে, শেওলা জমেছে, আর দেয়ালের উঁচু প্রাচীর তুলে এটাকে চুরি হয়ে গেছে সবার চোখের আড়ালে। কেন এমন হলো? কেন আমাদের স্বাধীনতার এই জীবন্ত সাক্ষীকে এভাবে ভুলে গেলাম?
এই ভাস্কর্যের জন্ম হয়েছে ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি, যখন তখনকার পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল মো. এ কে এম শহীদুল হক, বিপিএম, পিপিএম, এর ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন। নির্মাণের পিছনে ছিলেন তৎকালীন জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম (বার)—একজন যিনি স্বাধীনতার সেই আগুনকে নতুন করে জ্বালিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন। ভাস্কর্যটি ছিল শুধু পাথর-লোহার নয়, এ ছিল আমাদের জাতির আত্মার এক টুকরো। এতে ধরা পড়েছে সেই প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের মুহূর্ত—পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা, মুক্তিযোদ্ধাদের অটুট সাহস, আর স্বাধীনতার সেই রক্তিম সকাল। রাতের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠতো এটি, পথচারীরা থমকে দাঁড়াতো, চোখে জল নিয়ে স্মৃতির স্রোতে ভেসে যেতো। কারুকার্যে খোদাই করা নামগুলো যেন ফিসফিস করে বলতো, "আমরা ভুলব না।"
কিন্তু আজ? ওহ, কী কষ্ট! দেয়াল তুলে এটাকে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে, যেন কোনো অপরাধীকে জেলে পুরে রাখা। পথচারীরা অজান্তেই পেরিয়ে যান এর চত্বর, আর যারা জানে, তারা হতাশায় মাথা নিচু করে। রংগুলো যেন কাঁদছে, শেওলা জমে যেন সেই '৭১-এর ক্ষতচিহ্নগুলোকে আবার ছুঁয়ে ধরছে। এই অবহেলা শুধু একটা ভাস্কর্যের নয়, এ আমাদের সমগ্র ঐতিহ্যের উপর আঘাত। নতুন প্রজন্ম, যারা সেই গুলির শব্দ শোনেনি, রক্তের গন্ধ পায়নি—তারা কীভাবে জানবে আমাদের স্বাধীনতার মূল্য? এই ভাস্কর্য ছিল তাদের জন্য একটা জানালা, যা দিয়ে ইতিহাসের আলো ঢুকতো। কিন্তু এখন সেই জানালা বন্ধ, আর ইতিহাস যেন ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।
হৃদয় জুড়ে একটা ব্যথা, একটা অসহায়ত্ব। কেন আমরা এমন ভুলি? কেন সাংস্কৃতিক মূল্যবোধগুলোকে এভাবে উপেক্ষা করি? এই ভাস্কর্য নয় শুধু, এ আমাদের পরিচয়, আমাদের গর্ব, আমাদের কান্না আর হাসির মিশেল। সাধারণ মানুষের মনে এখন একটা আকুতি: প্লিজ, এটাকে মুক্ত করুন দেয়ালের বন্দিত্ব থেকে। ফিরিয়ে আনুন তার নান্দনিকতা, তার আলো, তার স্মৃতি। প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃত্ব—আপনারা শুনুন এই কান্না। একটা ছোট্ট পদক্ষেপে আপনারা ফিরিয়ে আনতে পারেন সেই উজ্জ্বল দিন। নইলে, এই স্মৃতিচিহ্ন যেন চিরকালের মতো হারিয়ে যাবে, আর আমরা সবাই অপরাধী হয়ে থাকবো—যারা ভুলে গেলো তাদের নিজেদের ইতিহাসকে।
মুক্তিযুদ্ধের সেই আত্মা এখনো জীবিত, শুধু আমাদের দরকার একটু যত্ন, একটু ভালোবাসা। চলুন, ফিরিয়ে আনি সেই গৌরব। 


 

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ