logo
ads

রামেলের রক্তে লেখা মাদকের লাল সূচনা—যেখানে ‘না’ বলার দাম জীবন

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৩ পি.এম
রামেলের রক্তে লেখা মাদকের লাল সূচনা—যেখানে ‘না’ বলার দাম জীবন

নিজস্ব

কিশোরগঞ্জের ধুলোমাখা গ্রাম্য পথে, যেখানে ধানের সবুজ ঢেউয়ের মাঝে লুকিয়ে থাকে অন্ধকারের ছায়া, সেখানে বাস করতো রামেল—একটা সোজাসাপটা তরুণ, যার সাহস যেন একটা জ্বলন্ত মশাল, যা মাদকের কালো ধোঁয়াকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। ২৫ বছরের এই যুবকের চোখে ছিল বিবেকের আগুন, যা সহ্য করতে পারত না গাঁজার গন্ধে মাখামাখি হওয়া এলাকার অপকর্ম। কিন্তু সেই মশালটাই শেষ পর্যন্ত তার নিজের বুকে বিঁধে গেল—যেন একটা নির্মম ছুরি, যা ‘না’ বলার শাস্তি হিসেবে তার হৃদয়কে চিরে দিল।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, হোসেনপুরের তেতুলিয়া গ্রামে মোহাম্মদ নাঈম নামের এক মাদকসেবী তার দলবল নিয়ে গাঁজার নেশায় ডুবে যাচ্ছিল, যেন একটা বিষাক্ত নদী যা গ্রামের শান্তিকে গিলে খাচ্ছে। পাশের জিনারী গ্রাম থেকে রামেল এসে দাঁড়াল সেই নদীর পথে—‘থামো, এটা ঠিক না’ বলে বাধা দিল। কথা কাটাকাটি শুরু হলো, যেন দুটো ঝড়ের সংঘর্ষ, যা কয়েকদিনের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়ে উঠল ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে। ক্রিকেট খেলে ফেরার পথে বেলথৈল মাঠের কাছে নাঈমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ছুটে এল—ছুরির ঝলকানিতে রামেলের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল, যেন একটা ফুলকে কুটিকুটি করে ফেলা হলো তার পাপড়ি ছিঁড়ে। গুরুতর আহত রামেলকে প্রথমে গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলো, কিন্তু অবস্থা আরও খারাপ হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হলো। সেখানে রাতের অন্ধকারে তার শেষ নিঃশ্বাস পড়ল—যেন একটা তারা আকাশ থেকে খসে পড়ল, চিরতরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

রামেলের মৃত্যু শুধু একটা শরীরের নির্গমন নয়, এটা এলাকার বিবেকের একটা গভীর ক্ষত—যেন একটা নদীর উৎসে বিষ ঢেলে দেওয়া হলো, যা পুরো গ্রামকে ধীরে ধীরে মারাত্মক করে তুলবে। শনিবার বিকেলে জিনারী গ্রাম ফেটে পড়ল প্রতিবাদে—মানববন্ধন আর মিছিলের ঢেউয়ে ভরে উঠল রাস্তা, যেন একটা জাগরণের গর্জন। নিহতের বাবা-মা রফিকুল ইসলাম আর যমুনা, স্বজন-বন্ধু, শিক্ষক থেকে শুরু করে স্থানীয় গণ্যমান্যরা—সবাই একত্রিত হয়ে চিৎকার করল, ‘খুনিদের গ্রেফতার করো, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও!’ নিহতের বাবা বাদী হয়ে ৩ অক্টোবর হোসেনপুর থানায় নাঈমসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা করেছেন, কিন্তু এখনও কেউ ধরা পড়েনি—যেন আইনের হাত দুই-আঙ্গুল দূরে থেকে তাকিয়ে আছে, নড়তে পারছে না।

স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল মিয়া ক্ষোভে ফেটে পড়েন, “মাদক এখন আমাদের গ্রামের শিরায়-শিরায় ঢুকে পড়েছে, যেন একটা ক্যান্সার যা ছড়িয়ে পড়ছে। রামেল সেটা ঠেকাতে গিয়েই খুন হয়েছে—এই হত্যার বিচার না হলে কেউ আর সাহস করবে না মাদকবিরোধী কথা বলতে। রামেল ছিল পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস, তারা এখন দিশেহারা—যেন একটা গাছ উপড়ে ফেলে দেওয়া হলো, তার ছায়ায় বাস করা সবাই অন্ধকারে ডুবে গেল।”

নিহতের বাবা রফিকুল ইসলামের কণ্ঠ কান্নায় ভেঙে যায়, “আমার ছেলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করত বলেই ওকে মেরে ফেলেছে—যেন একটা সিংহকে হত্যা করা হলো তার গর্জন শোনার ভয়ে। আমি রাজনীতি চাই না, শুধু বিচার চাই, যেন আর কোনো বাবা এমন করে ছেলেকে হারাতে না পারে।” জিনারী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, “রামেল ছিল শান্তিপ্রিয়, পরিশ্রমী—মাদকবিরোধী প্রচারে সর্বদা এগিয়ে থাকত, যেন একটা আলোর দিশারি। তাকে হারানো মানে একটা ভালো তরুণকে হারানো, যদি খুনিরা না ধরা পড়ে তাহলে মানুষ আইনের উপর বিশ্বাস হারাবে—যেন একটা সেতু ভেঙে যাবে, পেরিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে।”

হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মারুফ হোসেন বলেন, “ঘটনার পর থেকে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে”—কিন্তু এই কথাগুলো যেন একটা ফাঁপা আশ্বাস, যা রামেলের মায়ের চোখের জল শুকাতে পারছে না। প্রতিবেশীরা প্রশ্ন তোলে, “একজন মাদকবিরোধী তরুণকে হারিয়ে কি আমরা আবার নীরব হব? যেন একটা ঝড়ের পর আকাশ পরিষ্কার হয় না, বরং আরও ঘন মেঘ জমে।”

এই ঘটনা শুধু রামেলের নয়, এটা পুরো সমাজের একটা চিৎকার—মাদকের ছায়ায় যেখানে সাহসীদের জীবন বিপন্ন, সেখানে আইনের তরোয়াল কতটা ধারালো, তা প্রমাণ করার সময় এসেছে। রামেলের রক্ত যেন একটা লাল সূচনা, যা বলছে: ‘না’ বলার শাস্তি আর হবে না জীবনহানি—বরং হবে বিচারের বিজয়। গ্রামের এই অন্ধকার যেন আলোকিত হোক, যাতে আর কোনো মশাল নিভে না যায়।

 

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ