logo
ads

প্রান্তিক স্বাস্থ্য যোদ্ধাদের কান্নার ঢেউ: পটুয়াখালীতে ৬ দফা দাবিতে কর্মবিরতি

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:০৩ পি.এম
প্রান্তিক স্বাস্থ্য যোদ্ধাদের কান্নার ঢেউ: পটুয়াখালীতে ৬ দফা দাবিতে কর্মবিরতি

নিজস্ব

পটুয়াখালীর ধুলোমাখা সড়কে, যেখানে গর্ভবতী মায়েরা আশায় চোখ রাঙিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন টিকার অপেক্ষায়, সেখানে আজ নেমে এসেছে এক অন্ধকার ছায়া—স্বাস্থ্য সহকারীদের ক্ষোভের ছায়া। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ ইপিআইসহ তৃণমূল স্বাস্থ্য সেবার নিরলস যোদ্ধারা—স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা—নিয়োগবিধি সংশোধন, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং, ১৪তম গ্রেডে আপগ্রেডসহ ৬ দফা ন্যায়ের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে নেমেছেন। এই আন্দোলন শুধু একটা বর্জন নয়, এ তো ৪০ বছরের দীর্ঘ যন্ত্রণার চিৎকার—যেখানে প্রতিদিন গ্রামের দরজায় স্বাস্থ্যের আলো নিয়ে যাওয়া এই যোদ্ধারা নিজেরা অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছেন অবহেলার কালো মেঘে। আসন্ন টিসিভি টিকাদান ক্যাম্পেইনসহ সকল কার্যক্রম বর্জন করে তারা যে বার্তা দিচ্ছেন, তা যেন সরকারের দরজায় পৌঁছে গেছে: "আমাদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিন, না হলে স্বাস্থ্যের এই রক্তাক্ত সেবা থেমে যাবে।"

রবিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় পটুয়াখালী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশনের পটুয়াখালী সদর উপজেলা শাখার আয়োজনে ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচী পালিত হয়েছে—যেন রাস্তায় জমে উঠেছে হাজারো অসহায় চোখের আশা। এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য পরিদর্শক পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইনচার্জ মোঃ শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস, জেলা স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মোশতাক মাহমুদ, স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশন বরিশাল বিভাগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ ইদ্রিস, জেলা শাখার সদস্য মহসিন মাহমুদ, সদর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদা ফেরদৌস, সহ-সভাপতি সোহরাব হোসাইন, সদস্য দেলোয়ার বিশ্বাস, সভাপতি রাশিদা পারভীন, সদর উপজেলা পরিদর্শক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইত্তেক জাহান শিরিন প্রমুখ। তাঁদের কণ্ঠে মিশে আছে কত যন্ত্রণা: "আমরা প্রান্তিক মানুষের জীবন রক্ষায় দিনরাত লড়ি, কিন্তু নিজেদের গ্রেড, মর্যাদা, প্রশিক্ষণ—সবকিছুতে বঞ্চিত। সরকারের আশ্বাসগুলো কাগজে শুকিয়ে গেছে।" এই দাবিগুলো যেন তাদের হৃদয়ের রক্তাক্ত অক্ষর:

  • নিয়োগবিধি সংশোধন—যাতে তাদের কাজের মূল্য স্বীকৃতি পায়, অবহেলা না হয়।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতায় স্নাতক ডিগ্রিতে বিজ্ঞান বিষয় সংযুক্তকরণ—কারণ তারা শুধু সহায়ক নন, স্বাস্থ্যের স্থপতি।
  • ১৪তম গ্রেড প্রদান—যেন বেতনের যন্ত্রণা থামে, জীবনের হাসি ফুটে।
  • ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ—প্রশিক্ষণের ফলে নতুন দরজা খুলুক।
  • টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান—কারণ তাদের দক্ষতা টেকনিক্যাল, না শুধু সহায়ক।
  • পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীতকরণ—যাতে লড়াইয়ের শেষে আসে বিজয়ের আলো।

বক্তারা গভীর কণ্ঠে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছেন, "দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে—এই কর্মবিরতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে, সাতক্ষীরা, শিবচর, নড়াইল, মতলব উত্তরে একই আগুন জ্বলছে।" এই আন্দোলন ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় নির্দেশে, যা সারাদেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই কেন্দ্রের মধ্যে প্রতিদিন ১৫ হাজার কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে—ফলে দেড় লাখ মা-শিশু টিকা থেকে বঞ্চিত। পটুয়াখালীর এই অবস্থান যেন সেই মানবিক সংকটের প্রতীক, যেখানে শ্রমিক যোদ্ধাদের কষ্টে কাঁদছে গ্রামের প্রত্যেকটা ঘর।

এই কর্মবিরতি শুধু স্বাস্থ্য সহকারীদের নয়, আমাদের সকলের—কারণ তারা যদি ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তাহলে প্রান্তিক গ্রামের সেই মায়েরা কে সাহায্য করবে? স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। আশা করি, এই কান্নার স্বর শোনা হবে, এবং ন্যায়ের আলো জ্বলবে পটুয়াখালীর প্রত্যেকটা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। কারণ, স্বাস্থ্য যোদ্ধাদের হাসি ছাড়া দেশের স্বাস্থ্যের স্বপ্ন অসম্পূর্ণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ