logo
ads

অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাসে ঝুঁকিতে ভারত-বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশকাল: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৩ পি.এম
অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাসে ঝুঁকিতে ভারত-বাংলাদেশ

সংগৃহীত ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) একটি সতর্ক বার্তায় জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ছয়টির মধ্যে একটিই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার প্রতিরোধী ছিল। নতুন এই রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৪০%-এর বেশি ব্যাকটেরিয়া-অ্যান্টিবায়োটিক সংমিশ্রণে প্রতিরোধের হার বাড়েছে, যা প্রতি বছর গড়ে ৫–১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। 

১৩ অক্টোবর এই সতর্ক বার্তাটি প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিরোধ সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালভিত্তিক “সুপারবাগ” সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ও রোগনির্ণয়ের সুযোগ সীমিত। WHO বলেছে, কম মানের চিকিৎসা ও নির্ণয় সুবিধা পাওয়া জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ঘটে যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস বা পরজীবী এমনভাবে বিকশিত হয় যে যা আগে তাদের মারত, তা আর কার্যকর হয় না। অযথা বা ভুলভাবে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যবহার এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। প্রতিরোধী রোগজীবাণুর সংখ্যা বাড়লে সাধারণ চিকিৎসা অকার্যকর হয়, সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হয় এবং বিস্তারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

WHO-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ (AMR)-এর একটি জটিল পরিবেশের মুখোমুখি। এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে:

উচ্চ সংক্রমণের বীজ: ভারতের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

নিয়ন্ত্রণহীন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার: ওভার-দ্য-কাউন্টার বিক্রি, স্ব-চিকিৎসা, অসম্পূর্ণ কোর্স।

দুর্বল আইন প্রয়োগ: ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান অন AMR-এর বাস্তবায়ন রাজ্যভেদে অসম।

পরিবেশ দূষণ: হাসপাতাল, কৃষি ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প থেকে নদী ও মাটিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রবাহ।

তথ্য ও নজরদারির ঘাটতি: গ্রামীণ এলাকায় পর্যাপ্ত ল্যাব বা AMR ট্র্যাকিং নেই।

২০১৯ সালে ভারতের প্রায় ২,৯৭,০০০ মৃত্যু সরাসরি AMR-র কারণে হয়েছে, আর ১০,৪২,৫০০ মৃত্যুর সাথে এর সম্পর্ক আছে। বিশেষভাবে উদ্বেগজনক পাঁচটি রোগজীবাণু: Escherichia coli, Klebsiella pneumoniae, Staphylococcus aureus, Acinetobacter baumannii এবং Mycobacterium tuberculosis.

বাংলাদেশে পরিস্থিতি
বাংলাদেশও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অংশ হিসেবে AMR-এর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটিতে হাসপাতালভিত্তিক সুপারবাগ সংক্রমণ, অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি দেখা গেছে। ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, E. coli, K. pneumoniae এবং S. aureus সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট:

ওভার-দ্য-কাউন্টার অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি এবং স্ব-চিকিৎসা ব্যাপক।

সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগ নির্ণয় ও ল্যাব সক্ষমতা সীমিত।

ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প ও কৃষি থেকে নদী ও পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ ছড়াচ্ছে।

WHO-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে AMR সংক্রমণের ফলে মৃত্যুহার এবং দীর্ঘায়িত চিকিৎসা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

AMR(অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স)-এর পরিণতি

চিকিৎসা ব্যর্থ ও মৃত্যুহার বৃদ্ধি।

দীর্ঘ হাসপাতালকেন্দ্রিক চিকিৎসা ও ব্যয় বৃদ্ধি।

রুটিন চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ: সার্জারি, কেমোথেরাপি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, প্রসব।

দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এলাকায় সর্বাধিক প্রভাব।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা হুমকি।

পদক্ষেপ ও চ্যালেঞ্জ

ভারত ও বাংলাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ:

AMR ন্যাশনাল ও স্টেট/ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে নজরদারি ও রিপোর্টিং।

ল্যাব নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং অ্যান্টিবায়োটিক সংবেদনশীলতা পরীক্ষা।

চিকিৎসকদের মধ্যে সচেতনতা ও স্টুয়ার্ডশিপ উন্নয়ন।

ওভার-দ্য-কাউন্টার বিক্রি নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ দূষণ মোকাবিলা।

তবে চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে সীমিত তহবিল, জনসচেতনতার ঘাটতি, গ্রামীণ এলাকায় পর্যাপ্ত ল্যাব না থাকা এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোরতার অভাব।

নাগরিকদের করণীয়

অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার।

ভাইরাসজনিত রোগের জন্য দাবি না করা।

সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা।

অব্যবহৃত ঔষধ শেয়ার না করা।

হাত ধোয়া ও নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা।

টিকা গ্রহণে সহায়তা করা।

WHO-এর নতুন রিপোর্ট স্পষ্ট করে দেয়, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এখন শুধুমাত্র হুমকি নয়, বরং বাস্তবতা। ভারত ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জটিলতা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া একান্ত জরুরি।

সূত্র: WHO,  NDTV Health, Bangladesh Ministry of Health, 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ