শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি শক্তিশালী রাখতে শুধু একক খাবার নয়, বরং খাবারের সঠিক সংমিশ্রণ বা “ফুড সিনার্জি” অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার একসঙ্গে খেলে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জৈবউপলব্ধতা (bioavailability) বৃদ্ধি পায়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশীয় খাদ্যাভ্যাসে আমরা অনেক সময়েই অজান্তে এমন কিছু উপকারী সংমিশ্রণ খেয়ে থাকি—যা সঠিকভাবে অনুসরণ করলে ইমিউন সিস্টেম আরও শক্তিশালী হয়।
নিচে এমন কয়েকটি কার্যকর খাবারের সংমিশ্রণ ও তাদের উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. পালং শাক ও লেবু
পালং শাকে আছে প্রচুর আয়রন (লোহা), তবে এটি শরীরে সহজে শোষিত হয় না। লেবু বা কমলালেবুর মতো ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফলের সঙ্গে খেলে আয়রন সহজে শোষিত হয়। ফলে রক্তে অক্সিজেন পরিবহন ও রোগপ্রতিরোধে সহায়তা করে।
২. টমেটো ও স্বাস্থ্যকর চর্বি (তেল বা ঘি)
টমেটোতে থাকা লাইকোপিন ও অন্যান্য ক্যারোটিনয়েড চর্বিতে দ্রবণীয়। তাই রান্নায় সামান্য তেল বা ঘি ব্যবহার করলে টমেটোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ শরীরে বেশি কার্যকর হয়।
৩. হলুদ ও গোলমরিচ
হলুদের কারকিউমিন প্রদাহনাশক উপাদান, তবে শরীরে খুব কম শোষিত হয়। গোলমরিচে থাকা পাইপেরিন যৌগ কারকিউমিনের শোষণ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ডাল বা দুধে (হলুদ দুধে) এক চিমটি গোলমরিচ যোগ করা উপকারী।
৪. ফারমেন্টেড খাবার ও আঁশযুক্ত খাদ্য
দই, লাচ্ছি, ইডলি, ডোসা ইত্যাদি ফারমেন্টেড খাবারে জীবন্ত প্রোবায়োটিক থাকে। এগুলো আঁশযুক্ত খাবারের (ওটস, ফল, ছোলা) সঙ্গে খেলে গাট মাইক্রোবায়োম সক্রিয় থাকে ও রোগপ্রতিরোধ শক্তি বাড়ে।
৫. গ্রিন টি ও লেবু
গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে স্থিতিশীল রাখতে ভিটামিন ‘সি’ দরকার। তাই চায়ে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে খেলে তা আরও কার্যকর হয়।
৬. বাদাম/বীজ ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল
বাদাম ও বীজে রয়েছে জিঙ্ক, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই। এগুলো কমলা বা পেয়ারা জাতীয় ভিটামিন সি ফলের সঙ্গে খেলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকে।
৭. ফলের সালাদ ও বাদাম
ফল ও বাদামের মিশ্রণ শরীরে ফ্যাট-দ্রবণীয় ভিটামিন শোষণ সহজ করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। নিয়মিত ফল-বাদাম খেলে ত্বক, সেল মেরামত ও ইমিউন সিস্টেমে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
পুষ্টিবিদরা সতর্ক করেছেন, এসব খাবারের সংমিশ্রণ স্বাস্থ্যসম্মত হলেও তা কোনোভাবেই ওষুধ বা চিকিৎসার বিকল্প নয়। যাদের ওষুধ সেবন চলছে, বিশেষত যারা লিভার বা হার্টের ওষুধ নিচ্ছেন, তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হলুদ বা গোলমরিচের মতো উপাদান ব্যবহার করা।
তথ্যসূত্র:ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (NIH),পুষ্টি জার্নাল (ভিটামিন সি এবং ইমিউন ফাংশন, ২০১৭),এনসিবিআই ফুড সিনার্জি স্টাডিজ, ২০০৯–২০২৫,কারকিউমিন জৈব উপলভ্যতা পর্যালোচনা, এনআইএইচ (২০১৪–২০২১),রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রোবায়োটিক এবং সিনবায়োটিকের প্রভাব, ২০১৫–২০২৫
রচনা: মান্যা সিং (অনুবাদ ও সংযোজন: স্বাস্থ্য ডেস্ক, দৈনিক বর্তমানবাংলা)

