যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ঘিরে গড়ে ওঠা ফার্মেসিগুলোতে চলছে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণা। ওষুধের আসল দাম কয়েকশ টাকা হলেও হাসপাতালের দালাল ও ফার্মেসি মালিকদের যোগসাজশে তা কয়েকগুণ বাড়িয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
চৌগাছার তজবীসপুর গ্রামের জামির হোসেন (৫০) পেটের ব্যথায় হাসপাতালে ভর্তি হলে বৃহস্পতিবার তাঁর স্বজনরা দালালের মাধ্যমে ‘হ’ আদ্যক্ষরের একটি ফার্মেসি থেকে আড়াই হাজার টাকার ওষুধ কেনেন। পরে অন্য ফার্মেসিতে গিয়ে একই ওষুধের দাম জানতে চাইলে বলা হয় প্রকৃত মূল্য মাত্র ৩৫০ টাকা। একইভাবে সিরাজসিংহার সাহেব আলীর স্ত্রী শাবানা বেগম দেড়শ টাকার ওষুধ কিনতে গিয়ে গুনেছেন ১ হাজার ১৫০ টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, রোগীর স্বজনদের বিভ্রান্ত করতে প্রতারক চক্র হাসপাতালের ড্রাগ লিস্টের হুবহু কপি তৈরি করেছে। আবার অনেক সময় ওষুধের নাম লেখা সাদা কাগজে নিজেরাই দামি ওষুধের নাম লিখে টাকা নিলেও ওষুধ দেয়া হয় না।
হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এসব নামমাত্র ফার্মেসির র্যাকে থাকে খালি খোলা। কিছু সাধারণ ওষুধ মজুত থাকলেও বেশিরভাগ ওষুধ অন্য দোকান থেকে এনে দেয়া হয়। প্রতিটি ফার্মেসির পেছনে কমিশনভিত্তিক দালাল নিয়োগ করা আছে, যারা রোগীর স্বজনদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া, ট্রলি ঠেলা কিংবা ওয়ার্ডে বিছানা পেতে দেয়ার নাম করে বিশ্বাস অর্জন করে। এরপর ওষুধ কেনার কাগজ হাতে নিয়ে প্রতারণার জালে ফেলে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রফিসিন, ডরসিকম, ট্রাকশন, সেফটিএক্সোন, টিটাগামসহ বেশ কিছু দামি ওষুধের নাম স্লিপে জালিয়াতির মাধ্যমে ঢুকিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এভাবে হাতানো অর্থ ফার্মেসি মালিক ও দালালদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়।
ঝিনাইদহের মহেশপুরের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সোহান জানান, মায়ের জন্য একটি বমির ওষুধ কিনতে গিয়ে তাঁকে দিতে হয়েছে ১৯শ টাকা, অথচ প্রকৃত দাম মাত্র ৬০ টাকা। যশোরের মাহবুর রহমান অভিযোগ করেন, স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে দিতে হয়েছে ৯ হাজার টাকার বেশি, পরে সাংবাদিকের হস্তক্ষেপে ৪ হাজার ৬শ টাকায় নিষ্পত্তি হয়।
এভাবেই প্রতিদিন হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অনেক সময় দালাল ধরা পড়লেও মূল চক্র রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সোহেল রানা বলেন, “রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট ফার্মেসি মালিক ও দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ভুক্তভোগীরা এসব প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

