সমৃদ্ধির দেবী মা লক্ষ্মীর নরম পদধ্বনিতে কাঁপছে বাঙালি হৃদয়ের প্রত্যেক কোণ, যেন আশ্বিনের পূর্ণিমার জ্যোৎস্নায় ফুটে উঠেছে সুখ-শান্তির এক অপার্থিব বাগান—হৃদয়ের গভীরে বাজছে ভক্তদের অসীম কাঙ্ক্ষার কান্না, যা আকাশ ছুঁয়ে যায় আশীর্বাদের ঢেউয়ে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম শ্রী শ্রী লক্ষী পূজা সোমবার ঘরে ঘরে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা যেন এক মহান জাগরণের ডাক দিয়ে সমাজের প্রত্যেক দরজায় সমৃদ্ধির আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে—হিন্দু সম্প্রদায়ের এই উৎসব যেন এক নির্মল স্রোতের মতো প্রবাহিত হয়ে বাড়ির বাড়িতে শান্তির ফুল ফুটিয়ে তুলেছে, যাতে কোনো অন্যবস্ত্রের অভাব না হয়।
লক্ষ্মী দেবী সম্পদ ও কল্যাণের প্রতীক, যাঁর আশীর্বাদে ভক্তদের জীবন যেন এক উজ্জ্বল পথে চলতে থাকে—ঘর পরিষ্কার করে আলোর আলংকারে সজ্জিত করা, মিষ্টান্নের নৈবেদ্য প্রস্তুত করে দেবীকে স্বাগত জানানো যেন হৃদয়ের গভীর ক্ষত মুছে ফেলার মতো সান্ত্বনা দেয়, যা প্রত্যেক ভক্তের চোখে জলের ঢেউয়ের মতো দোলানো আনন্দ জাগিয়ে তোলে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, দেবীর দর্শনে যত খুশি হন, তত বেশি আশীর্বাদ বর্ষণ করেন—এই অনুভূতি যেন এক অদম্য ঝড়ের মতো উঠে সমাজের প্রত্যেককে মিলিয়ে দেয়, যাতে সৌভাগ্যের আলো চিরকাল জ্বলে।
মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ বা আলপনা আঁকা ঘরের ভিতর থেকে বাইরে পর্যন্ত যেন এক জীবন্ত পথ তৈরি করে, যাতে দেবী সহজে প্রবেশ করেন—পূর্ণিমার ভরা জ্যোৎস্নায় পেঁচার সঙ্গে মর্ত্যে আগমন করে লক্ষ্মী যেন বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখেন কারা রাত জেগে অপেক্ষায় আছেন, এই বিশ্বাস যেন হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসছে এক অটল প্রত্যয়ের গান। সন্ধ্যা থেকে অনুষ্ঠিত এই পূজা যেন এক বিষাক্ত অন্ধকারকে পেছনে ঠেলে আলোর রশ্মি ছড়ায়, যা প্রত্যেক পরিবারের বুকে শান্তির কাঁটা বিঁধিয়ে রাখে।
শ্রী শ্রী মা লক্ষ্মীর পূজায় ধান, কয়েন, পান-করি, হলুদ, ঘট-হাঁড়ি, আতপ চাল, দই, মধু, চিনি, ঘি—সবই যেন সমৃদ্ধির প্রতীক হয়ে উঠেছে, পুরাণমতে নারায়ণের জীবনসঙ্গী হিসেবে সিঁদুর, হরিতকী, কর্পূর, ধরে গামছা, পঞ্চগব্য, পঞ্চরত্ন, শিশুযুক্ত ডাব, ফল, দুর্বা, বাটি, তিরকাঠি লাগিয়ে পূজা যেন এক অপার্থিব উৎসবের রূপ নেয়। শারদ পূর্ণিমায় দেবীর আবির্ভাবের স্মৃতিতে রাত্রিজাগরণে বিষ্ণু-লক্ষ্মী পূজা করে অর্থ-খাদ্যের অভাব দূর করা যেন হৃদয়ের গভীর ক্ষতের ওষুধ, চাঁদের আলোয় খির নিবেদন করে অমৃত বর্ষণের আশা জাগায়—এই অনুষ্ঠান যেন এক মাতৃসমর্থক যুদ্ধ, যা সমাজের প্রত্যেককে জাগিয়ে তোলে চিরস্থায়ী আশীর্বাদের স্ফুলিঙ্গে।
প্রতি বছর পূর্ণিমায় সারা দেশে হিন্দুদের ঘরে ঘরে আনন্দমুখর পরিবেশে লক্ষী পূজা উদযাপিত হয়, গ্রামগঞ্জ থেকে শহরের অলিগলি পর্যন্ত ক্লাব-সংগঠনের আয়োজনে—ঘর পরিষ্কার, আলপনা আঁকা, মুড়ি-চিড়ার মোয়া, নারিকেল-তিলের নাড়ু, সন্দেশের মিষ্টান্ন তৈরিতে নারীদের ব্যস্ততা যেন এক উজ্জ্বল ছবি ফুটিয়ে তোলে, যা আশ্বিনের পূর্ণিমায় দেবীর ধন-কল্যাণের আগমনকে স্বাগত জানায়। গৃহলক্ষ্মী হিসেবে নারীদের পূজিত করে এই উৎসব যেন হৃদয়ের গভীরে এক অটল শান্তির অনুভূতি জাগায়, যা পারিবারিক মঙ্গলের স্বপ্ন বুনে।
পূজার রাতে ঘরে ঘরে দীপ জ্বালিয়ে ‘আলোয় ভরবে আশার ঘর’—এই কামনায় ভক্তরা প্রার্থনা জানাবেন, শান্তি-ধন-সম্পদের আশায় উপাচার নিবেদন করে যেন এক অদম্য আশার তীর ছুটে যাবে আকাশে। এবারের পূর্ণিমা তিথি সোমবার দুপুর ১১:৫৪-এ শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকাল ১০:০১-এ শেষ হবে, যা শ্রী শ্রী লক্ষ্মীদেবীর পূজাকে আরও গভীর করে তুলেছে—কোনো কোনো এলাকায় বড় প্রতিমা তৈরি করে পূজা যেন এক মহান উৎসবের রূপ নিয়েছে।
এই লক্ষী পূজার ছায়ায় যেন বাঙালির আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে উঠছে আশীর্বাদের রশ্মিতে, কিন্তু সেই রশ্মির উষ্ণতা যেন সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে—ভক্তদের প্রার্থনা, নারীদের ব্যস্ততা মিলে গড়ে তুলবে এক নতুন সমৃদ্ধির স্বপ্ন, যাতে মা লক্ষ্মীর কৃপায় চিরকাল শান্তি বইতে থাকে।

