logo
ads

পানছড়ির শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপিত দানোত্তম কঠিন চীবর দান

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশকাল: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৫ পি.এম
পানছড়ির শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপিত দানোত্তম কঠিন চীবর দান

বর্তমান বাংলা

শান্তির স্পর্শে মুখরিত পানছড়ির শান্তিপুর অরণ্য কুটির, যেন এক ঐশ্বরিক আলোয় আলোকিত। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দানের মধ্য দিয়ে এখানে যেন ধর্মের সুবাসে মন প্রাণ ভরে উঠেছে। ১১ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার বিকালে, বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় এই পুণ্যময় আয়োজন সম্পন্ন হয়, যেখানে হৃদয়ের গভীরে শ্রদ্ধা আর ভক্তির সুর বেজে ওঠে।

শুক্রবার বিকাল থেকে শুরু হয় এই পবিত্র যাত্রা। মোনোঘর জুম থেকে তুলা সংগ্রহের মধ্য দিয়ে যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের একাত্মতার সূচনা ঘটে। রাতের নিস্তব্ধতায় চরকার ঘুর্ণন, তুলা থেকে সুতার জন্ম, সুতার রঙে প্রাণ সঞ্চার—এক একটি ধাপ যেন ধৈর্য আর শ্রমের কাব্য। শনিবার ভোরের প্রথম আলোয় কঠিন চীবরের সেলাই সম্পন্ন হয়, যা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পবিত্র বস্ত্র হিসেবে অর্পিত হয়। এই ২৪ ঘণ্টার শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া শুধু কাপড় নয়, বুনে দেয় ভক্তি আর পুণ্যের এক অমর বন্ধন।

অরণ্য কুটিরের পবিত্র প্রাঙ্গণে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘ, শ্রামণসংঘ ও অষ্টশীল পালনকারীদের পিন্ডদান দিয়ে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। বৌদ্ধ পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধার আকাশে যেন একটি পবিত্র সুর ধ্বনিত হয়। বুদ্ধ পূজা, সীবলী পূজা, কল্পতরু দান ও স্বধর্ম শ্রবণে মুখরিত হয় পরিবেশ। পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের সন্ধর্মোপদেশ যেন মানুষের মনে শান্তির বীজ বপন করে।

এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজবন বিহার, রাঙ্গামাটির আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞা লংকার মহাস্থবির। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শাসন রক্ষিত মহাস্থবির, অধ্যক্ষ, শান্তিপুর অরণ্য কুটির; মহামিত্র মহাস্থবির, অধ্যক্ষ, ধর্মচক্র অরণ্য কুটির, রামগড়; বিমলান্দ মহাস্থবির, মৈত্রীপুর বন ভাবনা কেন্দ্র, ইটছড়ি; দেবমিত্র মহাস্থবির, রাজবন বিহারসহ খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন কুটিরের পরিচালক মহাস্থবিরগণ। তাঁদের উপস্থিতি যেন এই ধর্মীয় মহোৎসবে এক গভীর আধ্যাত্মিক মাত্রা যোগ করে।

এই উৎসবের হৃদয় ছিল কঠিন চীবর দান—যেখানে তুলা থেকে সুতা, সুতা থেকে কাপড়, আর কাপড় থেকে চীবরের অসাধারণ যাত্রা মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধার সঞ্চার করে। বৌদ্ধ শাস্ত্রে বলা হয়, গৌতম বুদ্ধের অনুগামী মহা উপাসিকা বিশাখা এই রীতি প্রবর্তন করেছিলেন। এই শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া শুধু কাপড় তৈরির কাজ নয়, এ যেন পুণ্যের পথে এক তীর্থযাত্রা, যা ভিক্ষুসংঘের হাতে তুলে দেওয়া হয় সর্বোত্তম দান হিসেবে।

শান্তিপুর অরণ্য কুটিরের প্রধান উপদেষ্টা সমীর দত্ত চাকমা, সহ-সভাপতি অসেতু বিকাশ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চাকমাসহ হাজারো নারী-পুরুষ, ভিক্ষু ও উপাসক-উপাসিকারা এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাঁদের উৎসবমুখর উপস্থিতি যেন শান্তিপুরের পাহাড়ি প্রান্তরে এক অপূর্ব ধর্মীয় মিলনমেলার সৃষ্টি করে। এই দানোত্তম কঠিন চীবর দান শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এ যেন মানুষের হৃদয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির এক অমর বার্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ