একটি হৃদয়স্পর্শী ভিডিও সামাজিক মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায়, একজন মুসলিম যুবক মোদিনায় দাঁড়িয়ে প্রেমানন্দ মহারাজের সুস্থতা ও দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া করছেন।
ভিডিওতে তিনি “সান্ত প্রেমানন্দ মহারাজ খুবই ভাল মানুষ” বলার পাশাপাশি, “হিন্দু বা মুসলিম এসব নিয়ে ভাবার সময় নয়, ভালো মানুষ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ” — এমন মর্মবাণী তুলে ধরেছেন। এই ঘটনাটি শুধু একটি ব্যক্তিগত দোয়া-চেষ্টা নয়, বরং ধর্ম ও সমাজবদ্ধতার হদয়ে এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার পাচ্ছে।
প্রেমানন্দ গৌবিন্দ শরণ, যিনি সাধারণত প্রেমানন্দ মহারাজ নামে সুপরিচিত, বৃন্দাবনভিত্তিক একজন হিন্দু আধ্যাত্মিক নেতা। তাঁর জন্ম ৩০ মার্চ ১৯৬৯, কানপুর (উত্তর প্রদেশ) কৈশোর থেকেই ধ্যান ও আধ্যাত্মিক সাধনায় চোখ গড়িয়েছেন, ১৩ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাসী জীবন বেছে নেন।
তিনি রাধা-ভাল্লভ সম্প্রদায় (Radha Vallabh Sampradaya) থেকে গুরুত্ব পান এবং শ্রদ্ধাবান অনুরাগীদের মধ্যে জনপ্রিয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। বর্তমানে প্রেমানন্দ মহারাজ গভীর স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখোমুখি রয়েছেন। বিশেষ করে কিডনি বিকলতা ও ডায়ালিসিসের প্রয়োজনীয়তা তার শারীরিক জীবনে একটা মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।দুই কিডনিই কার্যত “ফেইল” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘকাল ধরে তিনি ডায়ালিসিস করে চলছেন।
অনেকে কিডনি দানের প্রস্তাব দিয়েছেন, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন কারণ অন্য কারোর কষ্ট চায় না। তার আশ্রম থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে উল্লেখ আছে যে তিনি স্থিতিশীল আছেন এবং দৈনন্দিন কিছু কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার ‘প্রসাদ্য পদযাত্রা’ (পাদচার্য) আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সম্প্রতির একটি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, তার মুখে ফোলা ভাব ও লাল ভাব, যা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মদিনায় মুসলিম যুবকের এই দোয়া ভিডিওর ব্যাপক সাড়া পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই এই ঘটনাকে ধর্ম সীমা পার করে মানবিক বন্ধুত্ব ও সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে দেখছেন।
মুফতী শাহাবুদ্দিন রাজভি (বাড়েভিছি), অল ইন্ডিয়া মুসলিম জামেয়ার সভাপতি, সুফিয়ানের এই দোয়া-চেষ্টাকে ইসলাম ধর্মের সহমর্মিতার অংশ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। অনেকে পোস্ট ও মন্তব্যে লিখেছেন—
“ঈশ্বর আমাদের মাতৃভূমির শান্তি, ভ্রাতৃত্ব, সৌভ্রাতৃত্ব ও সমৃদ্ধি দিন।” “আপনি একজন ভালো মানুষ।” এই ধরণের আন্তঃমানবিক উদ্যোগ অনেকের কাছে আশার আলো স্বরূপ। এই ঘটনা একটি ইতিবাচক প্রসঙ্গ তৈরি করেছে যে ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায়— তা পার্থক্য করলেও মানবিক ও দয়াশীল মনোভাব মানুষের মধ্যে একাত্মতা সৃষ্টি করতে পারে।

