logo
ads

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের নতুন প্রকল্প উপস্থাপন আজ

মোঃ সিরাজুল মনির, চট্টগ্রাম ব্যুরো

প্রকাশকাল: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৯ পি.এম
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের নতুন প্রকল্প উপস্থাপন আজ

বর্তমান বাংলা

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে এক মহাপরিকল্পনা। মূল মসজিদটিকে সংরক্ষণ রেখে চারপাশে নির্মিত হবে চারতলা বিশিষ্ট আধুনিক মসজিদ কমপ্লেক্স, যেখানে একই সঙ্গে আট হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।

এছাড়া পাশে গড়ে তোলা হবে একটি ২০ তলা টাওয়ার এবং ৩৫ তলা উচ্চতার মিনার, যা হবে দেশের অন্যতম উঁচু ইসলামিক স্থাপনা। মোট ২৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকার ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে; বাকি অর্থ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অনুদান থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।

আজ (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের সামনে আটটি ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ নকশা উপস্থাপন করা হবে। আর আগামী রোববার (১২ অক্টোবর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

সূত্র জানিয়েছে, মুঘল আমলে নির্মিত আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা। ১৬৬৬ সালের ২৭ জানুয়ারি শায়েস্তা খাঁর পুত্র উমেদ খাঁ চট্টগ্রাম বিজয়ের পর ‘আন্দরকিল্লা’ অঞ্চলে প্রবেশ করলে এখানকার নাম হয় “আন্দরকিল্লা”— অর্থাৎ দুর্গের ভেতর। সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ সালে নির্মাণ করেন এই মসজিদ।

প্রায় একশ বছর পর, ১৭৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার মসজিদটিকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে। পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে জমিদার হামিদুল্লাহ খাঁর আবেদনের পর ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের প্রচেষ্টায় মসজিদটি পুনরুদ্ধার হয়। ১৯৮৬ সালে সরকার এটিকে অধিগ্রহণ করে এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে দেয়।

স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য

দিল্লির ঐতিহাসিক জামে মসজিদের আদলে নির্মিত এই মসজিদে ব্যবহৃত হয়েছে বিশাল পাথর। পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট ও প্রস্থ ২২ ফুট; দেয়ালগুলো প্রায় আড়াই গজ পুরু। মূল ছাদে একটি বড় এবং দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। পশ্চিম দেয়াল পোড়ামাটির, আর বাকি তিনটি পাথরের।

সাড়ে তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোটি কোটি মুসল্লির সেজদায় সিক্ত এই মসজিদ চট্টগ্রামের মানুষের আবেগের জায়গা। বহু বছর ধরে এখানে খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন পবিত্র মদিনা শরিফের আওলাদে রাসুলগণ (সা.)।

জরাজীর্ণ অবস্থা ও নতুন উদ্যোগ

দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মসজিদের ছাদ, পিলার ও মেহরাব ক্ষয়ে পড়েছিল। বৃষ্টির সময় বালতি বসিয়ে পানি ধরার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। করোনাকালে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। কুয়েত ফান্ড থেকে ১৪৭ কোটি টাকার সহায়তার প্রস্তাব এলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

অবশেষে সরকার ও স্থানীয় মুসল্লি পরিষদের সমন্বয়ে নতুন এই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা বিভাগের মন্তব্য

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ বজলুর রশীদ বলেন, “সাড়ে তিনশ বছরের পুরনো মূল মসজিদটিকে অক্ষুণ্ন রেখে এর সামনে একটি খোলা চত্বর রাখা হবে। চারপাশে চারতলা মসজিদ ভবনে নামাজ, অজুখানা, মিলনায়তন, পার্কিংসহ সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে।”

তিনি জানান, “মসজিদে একই সঙ্গে অন্তত আট হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। থাকবে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা। পাশেই ২০ তলা টাওয়ার ও তার সঙ্গে ৩৫ তলা উচ্চতার মিনার নির্মিত হবে।”

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সারওয়ার আলম জানান, “আজ বাদ জুমা মুসল্লিদের সামনে প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে এবং রোববার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সবাইকে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চট্টগ্রামের প্রাচীনতম ধর্মীয় নিদর্শন। এটিকে শহরের সবচেয়ে সুন্দর ও আধুনিক মসজিদে পরিণত করতেই সরকার এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নির্মাণ শেষ হলে পুরো আন্দরকিল্লার চেহারা পাল্টে যাবে, ইনশাআল্লাহ।”

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ