logo
ads

টাইফয়েডের ছায়া দূর করার প্রস্তুতি: চকরিয়ায় সিভিল সার্জনের সতর্ক নির্দেশনা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশকাল: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫০ পি.এম
টাইফয়েডের ছায়া দূর করার প্রস্তুতি: চকরিয়ায় সিভিল সার্জনের সতর্ক নির্দেশনা

প্রতিকী ছবি

কক্সবাজারের চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, যেখানে শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরের দাবানলের মতো গরমে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হকের পদধ্বনি কম্পিত করেছে প্রতিটি প্রাঙ্গণ। আগামীকাল, ১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) ক্যাম্পেইন—একটি জাতীয় যুদ্ধযজ্ঞ, যা ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশু-কিশোরদের রক্ষা করবে সালমোনেলা টাইফির নির্মম আক্রমণ থেকে। এই ক্যাম্পেইন, যা মে মাসের পরিকল্পনা থেকে অক্টোবরে স্থগিত হয়েছে স্বাস্থ্য সহকারীদের হরতালের কারণে, এখন এক মাসব্যাপী চলবে—প্রথমে স্কুল-মাদ্রাসায়, তারপর ইপিআই কেন্দ্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-অনুমোদিত এই হ্যালাল সার্টিফায়েড ভ্যাকসিন, গ্যাভি এবং ইউনিসেফের সহায়তায় সংগ্রহিত, ৩-৭ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে, এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মাত্র জ্বর বা ব্যথা—যা কয়েকদিনেই মিলিয়ে যায়। কিন্তু এই যুদ্ধযজ্ঞের সাফল্য নির্ভর করবে সঠিক প্রস্তুতির উপর, আর ডা. হকের পরিদর্শন যেন সেই প্রস্তুতিকে একটি অটল দুর্গে পরিণত করেছে।

চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিসিভি ক্যাম্পেইন কেন্দ্রে, যেখানে ভ্যাকসিনের ফ্রিজ থেকে শুরু করে টিকা দেওয়ার সরঞ্জাম—সিরিঞ্জ, কোল্ড চেইন বক্স, রেজিস্ট্রেশন ফর্ম—সবকিছু সাজিয়ে রাখা হয়েছে যেন একটি সৈন্যশিবির, সেখানে ডা. হকের চোখে ঝলকেছে দায়িত্বের আগুন। তিনি ছুটে এসেছেন কক্সবাজার থেকে, যেন একজন যোদ্ধা সেনাপতি যাচ্ছে যুদ্ধভূমির পরিদর্শনে। কর্মকর্তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে তাঁর কণ্ঠে ওঠে গুরুতর নির্দেশনার সুর: “ক্যাম্পেইনের সাফল্য নির্ভর করবে ১০০% কভারেজের উপর—প্রতিটি শিশুকে ধরতে হবে, জন্ম নিবন্ধন ছাড়াই। স্কুলে প্রথম ১০ দিন, তারপর ইপিআই কেন্দ্রে—কোনো ফাঁক রাখবেন না।” তাঁর কথায় ফুটে উঠেছে চ্যালেঞ্জের ছায়া: ইউনিসেফের স্থাপিত ১২০টি কোল্ড রুম সত্ত্বেও ম্যানপাওয়ারের অভাব, যা ১৭০০ ভ্যাকসিনেটর এবং ৮০০ সুপারভাইজারের দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু ডা. হকের নির্দেশনা যেন একটি আলোর রশ্মি—সন্ধ্যা ও সপ্তাহান্তে অতিরিক্ত সেশন, মেডিকেল-নার্সিং ছাত্রদের সম্পৃক্ত করে কভারেজ বাড়ানো। এই পরিদর্শন যেন শুধু হাসপাতালের দেওয়ালগুলোকে নয়, কর্মীদের হৃদয়কেও জাগিয়ে তুলেছে—টাইফয়েডের বার্ষিক ৮ হাজার মৃত্যুর মধ্যে ৬ হাজার শিশু-কিশোরের কথা মনে পড়িয়ে দিয়ে।

পরিদর্শনকালে উপস্থিত হয়েছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জায়নুল আবেদীন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোস্তফা কামাল, উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আরিফুল ইসলাম, ইএমটিপিআই পলাশ সুশীল, স্বাস্থ্য পরিদর্শক (ইনচার্জ) সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা—যেন একটি সম্মিলিত দল যারা টাইফয়েডের ছায়া দূর করার প্রত্যাশায় একত্রিত হয়েছে। ডা. হকের সাথে তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে বাস্তবের ছবি: দূষিত পানি-খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ানো এই রোগ, যা ২০২১ সালের এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে ১৫ বছরের নিচে ৬৮% মৃত্যুর দায়ী। কিন্তু এই ক্যাম্পেইন যেন একটি আশার দ্বীপ—যেখানে পোলিওর মতো টাইফয়েডকেও নির্মূল করা সম্ভব, ভ্যাকসিনের এক ডোজে। চকরিয়ার এই প্রস্তুতি যেন সারাদেশের একটি ছোট্ট চিত্র—যেখানে সিভিল সার্জনের নির্দেশনা শুধু কাগজের নয়, হৃদয়ের এক অটল প্রতিজ্ঞা। এই ক্যাম্পেইন শুরু হলে, প্রতিটি শিশুর হাসিতে ফুটে উঠবে স্বাস্থ্যের নতুন আলো, আর টাইফয়েডের অন্ধকার চিরতরে মিলিয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ