সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রাম যেন শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে এক নির্মম নাটকের মঞ্চে পরিণত হয়েছিল—যেখানে ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মোসাম্মৎ পারভীন বেগমের হাসির স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে রক্তের লালিমায়। আল-আমিনের স্ত্রী পারভীন, যার তলপেটে লুকিয়ে ছিল একটি অজন্ম জীবনের প্রথম ধুকপুক, তাঁর উপর অতর্কিত হামলা ও গুরুতর মারপিটের অভিযোগে গ্রামের বাতাস কাঁপছে অশ্রুর ফোঁটায়। অভিযোগ যেন একটি ছুরির ফলা—পারভীনের শাশুড়ি মোসাম্মৎ রাসনা বেগমের দায়ের লিখিত অভিযোগে উঠে এসেছে ৫ জনের নাম: মোহাম্মদ রুবেল মিয়া (২২), কয়েছ মিয়া (৩২), গয়াছ মিয়া (২৬)—সকলে পিতা মোহাম্মদ সিরাজ আলী; মোসাম্মৎ সুমি বেগম (২০), স্বামী মোহাম্মদ রুবেল মিয়া; এবং মোসাম্মৎ পিয়ারা বেগম (২৫), স্বামী মোহাম্মদ গয়াছ মিয়া। এই হামলায় রুবেল মিয়ার লাথির আঘাতে পারভীনের গর্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা জাগিয়েছে গ্রামের প্রতিটি মায়ের হৃদয়ে ভয়ের ছায়া—যেন একটি অজন্ম সন্তানের কান্না চিরকালের জন্য থেমে গেল অন্ধকারে।
আল-আমিনের বসতবাড়িতে সেই বিকেলের নিরিবিলি যেন হঠাৎ রূপান্তরিত হয়েছে রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্রে—মারামারি ও হাতাহাতির ঝড়ে উড়ে গেছে টিনের বেড়া, ছিন্নভিন্ন হয়েছে দরজা-জানালা, আর ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতির ছাপ রয়ে গেছে দেওয়ালে। অভিযোগ যেন একটি চিৎকার: বিবাদীরা দা দিয়ে টিন ছেঁড়া, কাঠের সুকেশ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা চুরি, আর পারভীনের উপর নির্মম আক্রমণ—যা তার গর্ভের সন্তানকে ছিনিয়ে নিতে পারে চিরকালের জন্য। রাসনা বেগমের (৫০) কণ্ঠ কাঁপছে অকাতরে কান্নায়: “বিবাদীরা নিরীহ পেয়ে অন্যায়ভাবে আমাদের বাড়িতে ঢুকে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করলো। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা না দাঁড়ালে আমরা বেঁচে থাকতাম কী করে? দ্রুত ন্যায়বিচার চাই, না হলে এই অন্ধকার আরও গভীর হবে।” তাঁর চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে পারভীনের হাসির স্মৃতি, যে হয়তো স্বপ্ন দেখছিল একটি ছোট্ট পরিবারের—কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন রক্তে ভেজা।
ঘটনার পর গ্রামের বাতাসে ভেসে উঠেছে উভয় পক্ষের অভিযোগের ঝড়—যেন একটি অন্ধকার চক্র, যা পরিবারকে চিরতরে বিভক্ত করে দিতে চায়। সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য জিয়াউল হকের কণ্ঠে উঠে আসে নিষ্পত্তির প্রতিশ্রুতি: “শুনেছি উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। তবে ঘটে যাওয়া বিষয়টি উভয়ের মধ্যে নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।” কিন্তু অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জাহিদুল হকের কথায় জাগে আইনের কঠোরতা: “উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির একটি ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই ঘটনা যেন একটি গভীর ক্ষত—যা শুধু পারভীনের গর্ভ নয়, গ্রামের নিরাপত্তা এবং নারীর অধিকারের উপর আঘাত করে। ভবানীপুরের এই নির্মম হামলা সমাজের অন্ধকার কোণগুলোকে উন্মোচিত করে—যেখানে পরিবারের ঝগড়া হয়ে ওঠে মৃত্যুর ফাঁদ, আর একটি অজন্ম সন্তানের কান্না চিরকালের জন্য থেমে যায়। আইনের হাত এখন যেন দ্রুত ছুটুক, যাতে পারভীনের মতো কোনো মা আর এমন শোকের মুখোমুখি না হয়, আর গ্রামের বাতাসে ফিরে আসে শান্তির সুর।

