logo
ads

বাউফলে প্রসূতির জরায়ুতে সিজারিয়ান কাচি: অবহেলার কালো ছায়ায় দগ্ধ এক পরিবার

বাউফল প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০৮ পি.এম
বাউফলে প্রসূতির জরায়ুতে সিজারিয়ান কাচি: অবহেলার কালো ছায়ায় দগ্ধ এক পরিবার

বর্তমান বাংলা

পটুয়াখালীর বাউফলে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা শিক্ষিত সমাজের মুখে কালির ছিটে ফেলেছে। খাদিজা আক্তার (২৬), একজন মা, যার জরায়ুর ভেতর থেকে পাওয়া গেছে সিজারিয়ান কাচি—একটি অকল্পনীয় অবহেলার সাক্ষ্য। এই ঘটনা যেন একটি কালো মেঘ, যা শুধু খাদিজার পরিবারের নয়, পুরো সমাজের বিশ্বাসকে টলিয়ে দিয়েছে।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর), বাউফল পৌরসভার বিলবিলাসের বাসিন্দা অটোচালক শাহিনের স্ত্রী খাদিজা আক্তার অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত উপজেলা চত্বরের ইসলামিয়া ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ১১টায় ডা. নুপুর আক্তারের তত্ত্বাবধানে চেকআপের পর জানানো হয়, বিকাল ৫টায় সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেবেন খাদিজা। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টায় অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পর যে দুঃস্বপ্ন শুরু হলো, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। আধঘণ্টা পর শিশুর কান্না ভেসে এলেও খাদিজাকে আর বের করে আনা হলো না। পরিবারের সদস্যদের বুকের ভেতর অজানা আতঙ্কের কাঁটা বিঁধতে শুরু করলো।

পরিবারের সদস্যরা বারবার খাদিজার খোঁজ নিলেও ক্লিনিকের কর্মীদের দৌড়ঝাঁপ আর অস্পষ্ট উত্তর তাদের হৃদয়ে সন্দেহের কালো ছায়া ফেলল। “বাচ্চা ও মা দুজনেই ভালো আছে”—এই আশ্বাসের কথাগুলো যেন ক্রমশ ফাঁপা মনে হতে লাগলো। হঠাৎ সেবা ক্লিনিক থেকে দুজন লোক এসে ওটিতে প্রবেশ করলো। এরপর এলো ভয়ংকর খবর: “রোগীর জরায়ুতে সমস্যা, তাকে বরিশাল পাঠাতে হবে।” স্বামী শাহিনের কাছে সই চাওয়া হলো, কিন্তু সত্য গোপন রাখার এই নাটক তাদের মনে বিশ্বাসের শেষ সুতোটুকুও ছিঁড়ে দিলো। বাকবিতণ্ডার পর পরিবার খাদিজাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে দ্বিতীয় অপারেশনে ডাক্তার যা বের করলেন, তা শুনে পুরো পরিবার যেন বজ্রপাতে স্তম্ভিত—খাদিজার জরায়ুতে লুকিয়ে ছিল একটি সিজারিয়ান কাচি!

খাদিজার স্বামী শাহিনের কণ্ঠে যন্ত্রণা আর ক্রোধ যেন এক সাগরের ঢেউ। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর কখনো জরায়ুর সমস্যা ছিল না। আমাদের প্রথম সন্তানও সিজারে হয়েছে, তখন তো কেউ এমন কথা বলেনি। চেকআপের সময়ও কিছু বলা হয়নি। সিজারের পর হঠাৎ জরায়ুর সমস্যা? এটা কীভাবে সম্ভব?” তার প্রশ্নগুলো যেন একটি ধারালো তীর, যা সত্যের গভীরে বিঁধতে চায়।

খাদিজার ভাই ইমরান হোসেনের কণ্ঠে রহস্য আর ক্ষোভের ঝড়। তিনি বলেন, “সিজারের পর বললো মা-বাচ্চা ভালো আছে। আধঘণ্টা পর বললো রোগীর অবস্থা খারাপ। বরিশালে নিয়ে আসার পর জরায়ু থেকে কাচি বের হলো! এটা কী রহস্য? সিজারে পেট কাটা হলেও জরায়ুর সঙ্গে কাচির কী সম্পর্ক?” তিনি দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এই অবহেলার জন্য আমরা আইনের আশ্রয় নেবো।” তার কথাগুলো যেন একটি প্রতিজ্ঞা, যা ন্যায়ের পথে অটল থাকার শপথ।

এই ঘটনা শুধু খাদিজার পরিবারের নয়, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। একটি কাচি, যা জীবন রক্ষার হাতিয়ার হওয়ার কথা, তা কীভাবে মৃত্যুর হুমকি হয়ে উঠলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সমাজের বিশ্বাসের ভিত কেঁপে উঠছে। খাদিজার জীবন যেন একটি আয়না, যা চিকিৎসা ব্যবস্থার অবহেলার কুৎসিত মুখটি প্রকাশ করেছে। এই ঘটনা কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি চিৎকার—ন্যায়, সততা আর মানবিকতার জন্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ