logo
ads

জিএইউ ধান-৩: গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নের ফসল, বাংলার কৃষিতে নতুন আলো

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশকাল: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৮ পি.এম
জিএইউ ধান-৩: গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নের ফসল, বাংলার কৃষিতে নতুন আলো

বর্তমান বাংলা

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (গাকৃবি) একটি নতুন স্বপ্নের জন্ম হয়েছে। কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রখ্যাত প্রজননবিদ অধ্যাপক ড. নাসরীন আক্তার আইভীর নেতৃত্বে উদ্ভাবিত ‘জিএইউ ধান-৩’ যেন বাংলার কৃষকের হৃদয়ে আশার প্রদীপ জ্বালিয়েছে। এই ধানের জাতটি শুধু একটি ফসল নয়, এ যেন একটি সোনালি ক্যানভাস, যার প্রতিটি দানায় লেখা আছে পুষ্টি, সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার গল্প।

দীর্ঘ চার বছরের নিরলস গবেষণার ফসল এই জিএইউ ধান-৩। দেশের বিভিন্ন মাটিতে, বিভিন্ন আবহাওয়ায় এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে, যেন একটি শিল্পী তার সৃষ্টিকে নিখুঁত করার জন্য বারবার রং তুলির ছোঁয়া দিয়েছে। বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির কঠোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গত ২০ এপ্রিল এই জাতটি ছাড়পত্র পেয়েছে। এই ধান যেন একটি পুষ্টির ভাণ্ডার—জিঙ্ক ও লৌহে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে রোগের কবল থেকে রক্ষা করে, হিমোগ্লোবিন তৈরির মাধ্যমে শক্তির সঞ্চার করে। এর চিকন, লম্বা দানা যেন কৃষকের মুখে হাসির রেখা আঁকে, আর সুগন্ধি চাল রান্নাঘরে ছড়ায় মনোমুগ্ধকর সুবাস। এই ধানের গাছ যেন একটি অটল যোদ্ধা—বড়, মজবুত কাণ্ড, কুশির প্রাচুর্য এবং জলবায়ু সহনশীলতার অসাধারণ ক্ষমতা। আমন মৌসুমে মাত্র তিন মাসে, বোরো মৌসুমে সাড়ে তিন মাসে ফলন দিয়ে এটি কৃষকের সময় ও শ্রমের মূল্য দেয়। হেক্টরপ্রতি সাড়ে ৫ থেকে ৬ টন ফলন, যা সাধারণ জাতের তুলনায় ১৫% বেশি, এই ধানকে কৃষকের স্বপ্নের সঙ্গী করে তুলেছে। এর অ্যামাইলেজ এনজাইম শরীরে শক্তি জোগায়, হজমে সহায়তা করে, আর জিঙ্কের প্রাচুর্য শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য যেন একটি পুষ্টির ঢাল। এই ধানের খড়ও গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা মেটাতে ছুটে আসে, যেন একটি ফসল থেকে সমৃদ্ধির অফুরন্ত ধারা প্রবাহিত হয়।

এই উদ্ভাবন বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা। গাকৃবির মোট উদ্ভাবিত জাতের সংখ্যা এখন ৯০-এ পৌঁছেছে, যা যেন একটি গৌরবের মুকুট। জিএইউ ধান-৩ শুধু ফসল নয়, এটি কৃষকের ঘামে ভেজা মাটির প্রতি শ্রদ্ধা, পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র। এর সুবাস যেন কৃষকের হৃদয়ে আশার সুগন্ধ ছড়ায়, আর রোগ-পোকা প্রতিরোধী গুণ দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশে এটিকে এক অপ্রতিরোধ্য সৈনিক করে তুলেছে।

উদ্ভাবক ড. নাসরীন আক্তার আইভীর কণ্ঠে গর্ব আর আনন্দের ঝংকার। তিনি বলেন, “আজকের বিশ্বে খাদ্যের পরিমাণের পাশাপাশি গুণগত মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিএইউ ধান-৩ শুধু একটি জাত নয়, এটি পুষ্টি, উৎপাদন ও কৃষকের সমৃদ্ধির মধ্যে একটি সেতু। এই জাত রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিতে নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে।” তার কথাগুলো যেন একটি প্রতিজ্ঞা, যা বাংলার মাটিকে পুষ্টির স্বর্ণযুগে নিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।

গাকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জিকেএম মোস্তাফিজুর রহমানের কণ্ঠে উচ্ছ্বাসের জোয়ার। তিনি বলেন, “জিএইউ ধান-৩ আমাদের কৃষি গবেষণার গৌরবময় প্রতীক। এটি ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির জন্য এক অমূল্য সম্পদ।” তার কথায় যেন প্রতিধ্বনিত হয় একটি জাতির স্বপ্ন—একটি সমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যবান ও পুষ্টিময় বাংলাদেশের স্বপ্ন।

জিএইউ ধান-৩ যেন একটি সোনালি ফসলের কাব্য। এটি শুধু ধান নয়, বাংলার কৃষকের হাসি, মাটির গর্ব, আর ভবিষ্যতের আলো। এই ধানের প্রতিটি দানায় লুকিয়ে আছে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি, যা কৃষকের ঘরে, মানুষের ডালিতে পুষ্টি আর সমৃদ্ধির গল্প লিখবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ