দেশ পরিচালনার মূল চাবিকাঠি হলো রাষ্ট্রযন্ত্র। রাষ্ট্রযন্ত্র যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই অনুযায়ী দেশ চলবে। গনতান্ত্রিক হোক বা অন্য কোনো শাসনব্যবস্থা, নিয়ম ও নীতি সবসময় রাষ্ট্রের নির্দেশনা এবং প্রশাসনের কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—দেশের পাবলিক সার্ভেন্টরা, যেমন পুলিশ, সেনাবাহিনী, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা, যাদের কাজ রাষ্ট্রের আইন ও নির্দেশনার ওপর নির্ভরশীল, তাদের দায় কতটুকু?
পাবলিক সার্ভেন্টরা মূলত রাষ্ট্রযন্ত্রের আদেশ এবং নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে। তারা নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না; তারা যেমন নির্দেশনা পায়, তেমনই পালন করে। এক কথায়, “নাচাও যেভাবে, তেমনি নাচবে পুতুলের কি দোষ?” এই অবস্থাটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্দেশ পালন করায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হয়রানি, মামলা, চাকুরীচ্যুতি, হামলা এবং বিভিন্ন ধরনের দণ্ডের মুখে পড়ছেন। এই দমনমূলক পরিবেশ শুধু তাদের মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে না, দেশের প্রশাসনিক দক্ষতাকেও ব্যাহত করছে।
পাবলিক সার্ভেন্টরা অপরাধী নয়। তাদের দোষ নেই। দোষ মূলত নির্দেশনায় বা ব্যবস্থাপনার ঘাটতিতে। দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার এই ধারা বহু দিন ধরে চলমান। ফলে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো দোষ ছাড়াই বিপদে পড়ছেন, যা ন্যায়সংগত নয়।
সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগনের বন্ধু হওয়া। জনগনকে সেবা দিতে হবে, ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে নয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের নীতি ও আদেশ যদি সঠিকভাবে জনগনের কল্যাণমুখী হয়, তবে পাবলিক সার্ভেন্টরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে। এর ফলে সমাজে ন্যায়, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
দেশকে শুধুমাত্র শাসক বা সরকারের স্বার্থ অনুযায়ী নয়, জনগনের কল্যাণ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পরিচালনা করতে হবে। কর্মকর্তাদের ওপর অযথা চাপ, হয়রানি বা শাস্তির সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। তাদের কাজের মূল্যায়ন হওয়া উচিত দক্ষতা, সততা এবং জনগণের সেবার মানদণ্ডে।
শেষ পর্যন্ত, রাষ্ট্রযন্ত্রের আদেশ অনুযায়ী কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। সরকারকে জনগনের বন্ধু হতে হবে—পুতুল নয়—যারা দেশের সুষ্ঠু পরিচালনায় সহায়ক। রাষ্ট্র ও জনগনের মধ্যে এই সেতুবন্ধনই দেশের উন্নয়ন ও ন্যায়বিচারের মূল ভিত্তি।
লেখক পরিচয়:
শিক্ষক ও সাংবাদিক
সাধারণ সম্পাদক, মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাব, পিরোজপুর
E-mail: sharifsstyle@gmail.com

