বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড বলা হয় শিক্ষক সমাজকে। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে—এই মেরুদণ্ড আজ ভেঙে পড়ার উপক্রম। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে যে অযৌক্তিক বৈষম্য ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন, তারই প্রতিবাদে দেশের শিক্ষকরা আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন।
সরকারি শিক্ষকরা বিভিন্ন ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ও পেনশন সুবিধা ভোগ করলেও এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা একই কাজ করেও প্রাপ্য মর্যাদা ও ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাঁরা জাতি গঠনের মূল কারিগর, অথচ তাঁদের বেতন কাঠামো এতটাই সীমিত যে অনেক শিক্ষক পরিবারের নিত্যপ্রয়োজন মেটাতেও হিমশিম খান। চিকিৎসা ভাতা, বাড়ি ভাড়া ভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধির দাবি তাঁদের কোনো বিলাসিতা নয়—এটি একটি ন্যায্য দাবি।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছেন, তা আসলে শিক্ষা খাতের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও অবহেলার বিরুদ্ধে এক নীরব প্রতিবাদ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই আন্দোলনেও দেখা গেছে প্রশাসনের কঠোর আচরণ, এমনকি শিক্ষক লাঠিপেটার মতো অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে।
একজন শিক্ষককে অপমান করা মানে পুরো জাতিকে অপমান করা—এটি আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
রাষ্ট্র যদি সত্যিই “সবার জন্য শিক্ষা” বাস্তবায়নে আন্তরিক হয়, তবে প্রথমে শিক্ষকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও আর্থিক নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ শিক্ষক যদি সুখে না থাকেন, শিক্ষার মান কখনোই উন্নত হবে না। শিক্ষা শুধু পাঠ্যপুস্তকের সীমাবদ্ধ জ্ঞান নয়; এটি মানবিকতা, নৈতিকতা ও চরিত্র গঠনের প্রক্রিয়া—আর সেই প্রক্রিয়ার চালিকাশক্তি হলেন শিক্ষক।
শিক্ষকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। সরকারের উচিত তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি টেকসই ও বাস্তবসম্মত সমাধান বের করা। শিক্ষককে অবহেলা করা মানে শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবমূল্যায়ন করা, যা জাতির ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনবে।
শেষ কথা:
শিক্ষকদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়—এটি অবহেলিত শ্রেণীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। এই আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে সরকার ও সমাজ উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে।
কারণ, শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা মানে জাতির মর্যাদা রক্ষা।
লেখক:
মো. রোকনুজ্জামান শরীফ
শিক্ষক ও সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক, মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাব, পিরোজপুর।
sharifsstyle@gmail.com

