শিক্ষা দিতে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের ওপর সহিংস আচরণ কোনো সভ্য রাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্য নয়; দায়মুক্তি মেনে নেওয়া হবে না।
গত ১২ অক্টোবর রোববারের ঘটনাবলীর আলোয় আমরা দেশের সেই মৌলিক প্রশ্নটির সঙ্গে পুনরায় মুখোমুখি হচ্ছি — ক্ষমতার ব্যবহারে কি ন্যায়বিচার, মানবিকতা ও জাতীয় মর্যাদা বজায় রাখা হচ্ছে? শিক্ষকের গায়ে পুলিশের লাঠিপেটা, দাড়ি টানা, ব্যক্তিগত সামগ্রীর অবমাননা—এসব কেবল এক বা দুই ব্যক্তির কুকর্ম নয়; এগুলো জাতির নৈতিক দায়িত্ব, আইনি শৃঙ্খলা ও সমাজের সাংস্কৃতিক স্বাস্থ্যের প্রতিফলন। শিক্ষকরা শিশুরা, তরুণরা ও সমাজকে গড়ে তোলার প্রথম সারির শিক্ষক; তাদের সম্মান রক্ষাই শিক্ষিত জাতির পরিচয়।
শিক্ষকের পরিচয়কে জনসেবা কিংবা অফিসের যুক্তিসঙ্গত দায়িত্বের বাইরে এনে হামলা ও হেনস্থা করা কখনোই যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। দেশের অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা, তাদের পাঠ নেয়া এই মানুষগুলোই আজ দেশের বিভিন্ন দপ্তরে, সেনা, পুলিশ ও অফিসে অবস্থান করছে। সেই বাস্তবতাই আরও এক প্রশ্ন তোলে—আপনি যে প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন, আপনি কি কখনো শিক্ষকের মর্যাদা ভেবে দেখেননি? সেই সম্মান ভুলে গিয়ে যদি কেউ সহিংসতা করে, তাহলে সমাজ কীভাবে বিবেকচেতনা হারাচ্ছে?
রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে মর্যাদা ও নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবু যখন সেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাই শারীরিক নির্যাতনে লিপ্ত হন, তখন আইনপ্রণেতা, বিবেকবান সমাজ ও স্বাধীন দেশের নাগরিক সবাইকে প্রশ্ন করতে হবে। দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত, দায়ীদের শনাক্তকরণ ও আইনানুগ শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের সম্মানজনক ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ—এসব না করলে দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বিভক্ত হবে।
প্রস্তাবনা:
১. ঘটনা সম্পর্কে স্বচ্ছ তদন্ত চালান এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
২. শিক্ষাব্রতী ব্যক্তিদের প্রতি কুরুচিকর আচরণ করা কোনো অপচেষ্টা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শৃঙ্খলাবদ্ধ পদক্ষেপ নিন।
৩. পুলিশ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য মানবতাবাদী আচরণ, সংবেদনশীলতা ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ চালু করুন যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাণ্ড পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
শেষ কথা:
পুলিশ-অফিসাররা যদি নিজেও কখনো কোনো শিক্ষকের শরণায় গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন, তবে কেনই বা আজ তাঁদের হাতে কেবল লাঠিই ভরসা? সভ্য সমাজে ক্ষমতা মানেই দায়বোধ; যদি সেই দায়বোধ না থাকে, তাহলে আমরা কাকে নাগরিক ও মানুষ বলব? আমরা দেশবাসী হিসেবে দাবি করছি—শিক্ষকদের সম্মান রক্ষা করা হোক নীতি; অন্যথায় ইতিহাস তাদের বিরুদ্ধে স্বরূপে দায়ী করে রাখবে। যারা অতি উৎসাহী বা অসংযত আচরণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও ন্যায্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক; ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাই হবে আমাদের প্রথম কর্তব্য।
লেখক:
শিক্ষক ও সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক
মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাব, পিরোজপুর
sharifsstyle@gmail.com

