প্রতিবছর হাজারো নেপালি ছাত্র বাংলাদেশে পড়তে আসে, এখন তাদের অনুপ্রেরণায় বদলাচ্ছে কাঠমান্ডুর রাজপথ
নেপাল জ্বলছে। সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে উত্তাল হয়ে ওঠা যুবসমাজ দেশের রাজনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। নিহত অন্তত ২২ জন। পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। সেনার হাতে আপাতত ক্ষমতা। কিন্তু এই বিপ্লবের ভেতরে আরেকটি গল্প লুকিয়ে আছে—বাংলাদেশে পড়তে যাওয়া নেপালি ছাত্রদের অনুপ্রেরণা।
নেপালি ছাত্রদের বাংলাদেশ সংযোগ
বর্তমানে বাংলাদেশে পড়ছে প্রায় ৩,০০০ নেপালি ছাত্র
মূল বিষয়: মেডিকেল, ডেন্টাল, কৃষি, টেকনিক্যাল শিক্ষা
প্রতিবছর ভর্তি: গড়ে ২,৫০০–৪,০০০ জন
সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে ২২টি মেডিকেল/ডেন্টাল স্কলারশিপ
২০২৪ সালে রাজনৈতিক উত্তেজনায় ৮০০ শিক্ষার্থী দেশে ফিরে যায়
বাংলাদেশের ছায়া নেপালের রাজপথে
বাংলাদেশের ১৯৭১-পরবর্তী ছাত্র আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী সংগ্রাম নেপালি ছাত্রদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ঢাকা থেকে ফেরা তরুণরা এখন কাঠমান্ডুর রাজপথে দাঁড়িয়ে বলছে—
সংবিধান সংস্কার চাই
দুর্নীতিবাজ নেতাদের সম্পদের তদন্ত চাই
নিহতদের শহিদ মর্যাদা চাই
সামাজিক ন্যায় ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চাই
এক বিবৃতিতে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে দিয়েছে:
“এটি কোনও দল বা ব্যক্তির জন্য নয়, এটি আমাদের পুরো প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্য।”
বাংলাদেশ থেকে নেপাল
২০১৫: নেপালে রাজতন্ত্র পতনের পর সংবিধান সংস্কার → বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকে মডেল ধরা হয়।
২০২০: প্রধানমন্ত্রী ওলির বিতর্কিত রাম-অযোধ্যা মন্তব্যে ভারত-নেপাল সম্পর্কে টানাপোড়েন।
২০২৪: আন্দোলনের উত্তাপে ৮০০ নেপালি ছাত্র বাংলাদেশ থেকে দেশে ফিরে যায়।
২০২৫: ‘জেন জি বিপ্লব’ রক্তাক্ত রূপ নেয়; ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন।
আঞ্চলিক প্রভাব
ভারত: নেপালের সংকটে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ; ওলির অভিযোগ— “দিল্লিকে চ্যালেঞ্জ করাতেই গদি হারালাম।”
বাংলাদেশ: দক্ষিণ এশিয়ায় এক উদীয়মান রাজনৈতিক মডেল। ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়ছে নেপালে।
আন্তর্জাতিক মহল: নেপালের গণতন্ত্র নিয়ে শঙ্কিত; তবে ওলির ভারত-বিরোধী বক্তব্যকে মূল কারণ নয়, বরং রাজনৈতিক ‘দোষ চাপানো’র কৌশল হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষণ
বাংলাদেশে পড়তে আসা নেপালি শিক্ষার্থীরা দেশে ফিরছেন কেবল ডিগ্রি নিয়ে নয়, ফিরছেন এক নতুন রাজনৈতিক বোধ ও আন্দোলনের সংস্কৃতি নিয়ে।
তাদের হাত ধরে নেপালে বাংলাদেশি স্টাইলের গণআন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে।
সেনা এখন অন্তর্বর্তী শাসন করছে, কিন্তু যুবকদের দাবি ক্রমেই রাজনৈতিক চাপ তৈরি করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এবার কি নেপালে বাংলাদেশ মডেলের মতো অন্তর্বর্তী সরকার ও সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়িত হবে?
নেপালের জেন জি বিপ্লব প্রমাণ করে দিয়েছে— শিক্ষা শুধু ডিগ্রি দেয় না, দেয় পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা। ঢাকার ক্লাসরুম থেকে শেখা অভিজ্ঞতা এখন কাঠমান্ডুর রাজপথে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার নতুন রাজনৈতিক রেফারেন্স হয়ে উঠছে, আর নেপালের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে সেই তরুণ প্রজন্ম, যাদের চোখে ভেসে উঠছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টগবগে আন্দোলনের ছবি।
লেখক: নিপুণ চন্দ্র, মফস্বল সম্পাদক, দৈনিক বর্তমান বাংলা

