logo
ads

পিআর বনাম এফপিটিপি রাজনীতি: জনগণ কোন পথে? ২য় অংশ

নিপুণ চন্দ্র

প্রকাশকাল: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২০ পি.এম
পিআর বনাম এফপিটিপি রাজনীতি: জনগণ কোন পথে? ২য় অংশ

প্রতিকী ছবি

প্রথম অংশের পর-

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি ও ইসলামী দলগুলো নির্বাচনী পরিবেশে ভিন্ন কৌশল ও দাবি নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই ধারা কেবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জনগণের আস্থা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করছে।

১. ৩১ দফা বনাম পিআর দাবি

বিষয়

বিএনপি ৩১ দফা

ইসলামী দলগুলোর পিআর দাবি

গণতান্ত্রিক প্রভাব

তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা; FPTP পদ্ধতি বড় দলকে সুবিধা দেয়

PR পদ্ধতি ছোট দল সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ায়; গণতান্ত্রিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে

অর্থনৈতিক সামাজিক সুবিধা

কৃষি, শিল্পায়ন, নারী-যুব ক্ষমতায়ন; বেসরকারি উদ্যোগ বেকারত্ব হ্রাস করতে পারে

সংখ্যালঘু প্রান্তিক গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর বৃদ্ধি; অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অস্পষ্ট

ঝুঁকি

অতীত দুর্নীতি, সহিংসতার রেকর্ড, ফ্যাসিস্ট প্রবণতার আশঙ্কা

ধর্মীয় মেরুকরণ, অস্থিরতা, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধকরণের দাবি

জনসমর্থন

যুবকদের মধ্যে সমর্থন ৩৮.৭৬%; তবে অতীত ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত

যুবক ইসলামী ভোটারদের সমর্থন ২১.৪৫%; ধর্মনিরপেক্ষ জনগোষ্ঠীতে সংশয়

বাস্তবায়ন সম্ভাবনা

ব্যাপক পরিকল্পনা, তবে অতীত ব্যর্থতা সংশয় তৈরি করে

আন্তর্জাতিক মডেল অনুযায়ী সম্ভব, কিন্তু রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব বাধা

২. নির্বাচনী পরিবেশ ও অস্থিরতার সম্ভাবনা
বিএনপি কৌশল: ঘরে ঘরে জনসম্পৃক্ততা, লিফলেট ও সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে ৩১ দফা পৌঁছে দিচ্ছে। এটি নির্বাচনমুখী প্রস্তুতি এবং জনগণের আস্থা অর্জনের প্রচেষ্টা।
ইসলামী দল কৌশল: রাজপথ আন্দোলন, র্যালি এবং PR দাবির মাধ্যমে ছোট দল ও সংখ্যালঘুর ভোটারদের কণ্ঠস্বর বৃদ্ধি করছে।
অস্থিরতার ঝুঁকি: উভয় পক্ষের আন্দোলন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত রাজপথ আন্দোলন অর্থনীতি ও জনজীবনে ক্ষতি করতে পারে।

৩. দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
বিএনপি ৩১ দফার ইতিবাচক দিক:
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দীর্ঘমেয়াদে নির্বাচনী স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে। নারী-যুব ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক উদ্যোগ যুবক ও নারীর জন্য মঙ্গলময়। স্বাধীন দুদক ও বিচার বিভাগ দুর্নীতি কমাতে সহায়ক।
ঝুঁকি: অতীত দুর্নীতি, সহিংসতা এবং দলীয় শৃঙ্খলার অভাব পূর্ণ বাস্তবায়নকে কঠিন করে।
FPTP পদ্ধতি ছোট দল ও সংখ্যালঘুর প্রতিনিধিত্ব সীমিত করে।
রাজনৈতিক কেন্দ্রীকরণ ও ফ্যাসিস্ট প্রবণতার সম্ভাবনা আংশিক বিদ্যমান।
ইসলামী দলগুলোর পিআর দাবির ইতিবাচক দিক: 
PR পদ্ধতি সংখ্যালঘু ও ছোট দলের প্রতিনিধিত্ব বাড়ায়, গণতান্ত্রিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে। বিচার ও সংস্কারের দাবি জনগণের ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে।
ঝুঁকি: ধর্মীয় মেরুকরণ সামাজিক সম্প্রীতিতে হুমকি তৈরি করতে পারে। অতীত বিতর্ক এবং রাজপথ আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অস্পষ্টতা দীর্ঘমেয়াদি মঙ্গল সীমিত করে।

৪. ফ্যাসিস্ট সরকার সম্ভাবনা
ফ্যাসিস্ট শাসন বলতে বোঝায়—কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা, বিরোধী দমন এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন।

বিষয়

বিএনপি

ইসলামী দল

সম্ভাব্য ঝুঁকি

অতীতের হাওয়া ভবন, গ্রেনেড হামলা, বিরোধী দমন; রাজপথ আন্দোলন জোট নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রিকরণ ইঙ্গিত

ধর্মভিত্তিক আন্দোলন, অতীত যুদ্ধাপরাধ; PR সহকর্মীদের একক ক্ষমতা নেই, ফলে ঝুঁকি তুলনামূলক কম

সম্ভাব্য বাধা

জুলাই বিপ্লবের জনচাপ, এনসিসি আলোচনা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ, রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা

রাজনৈতিক শক্তি সীমিত; গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধা

সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ফ্যাসিস্ট প্রবণতা আংশিক বিদ্যমান, তবে গণতান্ত্রিক চাপ আন্তর্জাতিক নজরদারি সীমিত রাখছে

এককভাবে ফ্যাসিস্ট শাসন সম্ভাব্য নয়; কিন্তু ধর্মীয় মেরুকরণ ঝুঁকি তৈরি করে

৫. জনগণের জন্য করণীয়
বিএনপি ও ইসলামী দল উভয়ের দাবির সত্যতা যাচাই করা।
নির্বাচনমুখী প্রস্তুতি, জনসম্পৃক্ততা এবং গণতান্ত্রিক চাপ বজায় রাখা।
PR পদ্ধতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমন্বয় এনসিসি আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব।
অতীত রেকর্ড, দলীয় শৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বিবেচনায় নিয়ে ভোট প্রদান।

পরিশেষে বলা যায়, বিএনপির ৩১ দফা: দীর্ঘমেয়াদে ব্যাপক সংস্কার, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা। যুবক ও নারীর জন্য মঙ্গলময় হতে পারে। তবে অতীত দুর্নীতি, সহিংসতা এবং FPTP পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা জনগণের আস্থা সীমিত করে। ইসলামী দলগুলোর পিআর দাবি: গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কার্যকর। তবে ধর্মীয় বিভাজন এবং অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অস্পষ্টতা দীর্ঘমেয়াদি মঙ্গল সীমিত করে। চূড়ান্ত রায়: জনগণের জন্য সর্বোত্তম ফলাফল হবে উভয় পক্ষের সংস্কারমুখী দাবির সমন্বয়। যেমন—তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং PR পদ্ধতির মাধ্যমে সংখ্যালঘু ও ছোট দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
 

লেখার ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

লেখক: নিপুণ চন্দ্র, মফস্বল সম্পাদক, দৈনিক বর্তমান বাংলা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ