আগামী ফেব্রুারিতে রোজার আগে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসেম্বর মাসে এবার অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি, তা পিছিয়ে নির্বাচনের পরে করার প্রস্তাব এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় নির্বাচনের আগে নিরাপত্তাজনিত কারণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বইমেলা আয়োজনের সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা ডিসেম্বরেই বইমেলা করার বাস্তবতা তুলে ধরবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা ফয়সল হাসান জানান, বইমেলা নির্বাচনের পর আয়োজনের ব্যাপারে আইনশৃংখলা সংক্রান্ত সভায় আলোচনা হয়েছে। সেটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কিংবা মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে বলতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, “নির্বাচনের আগে বইমেলা আয়োজন না করার জন্য আমাদেরকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে। আমরা রোববার নাগাদ তাদের সঙ্গে কথা বলবো। এরপর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবো।”
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “নির্বাচনের আগে দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বইমেলা পেছানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারের আইনশৃংখলা সংক্রান্ত সভায়। সেই সভার ‘রেজ্যুলেশন’ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে এসেছে। পরে তা বাংলা একাডেমির কাছে পাঠানো হয়েছে।”
বাংলা একাডেমির সচিব সেলিম রেজার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে বইমেলা না করার জন্য আমাদেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সাথে কথা বলবো। নির্বাচনের পর বইমেলা আয়োজন করা কেন বাস্তবসম্মত নয়, তা তুলে ধরবো।”
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি আগেই জানিয়েছিল, নির্বাচনের পর রোজা এবং ঈদের ছুটি কাটিয়ে মেলা আয়োজন বাস্তবসম্মত হবে না। কারণ সেসময় ঝড়-বৃষ্টির দিন থাকবে।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের রীতি থাকলেও এবার নির্বাচন আর রোজার কারণে তা এগিয়ে ডিসেম্বর মাসে মেলা আয়োজনের তারিখ জানায় বাংলা একাডেমি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে রোজা শুরু হবে। তার আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ দুটো বিষয় মাথায় রেখেই একুশে বইমেলার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছিল আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।
১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির ফটকে চট বিছিয়ে প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা যে বই বিক্রি শুরু করেছিলেন, তা পরে একুশে বইমেলায় রূপ নেয়। ১৯৮৩ সালে এরশাদের সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কারণে একবার বইমেলা বন্ধ হয়েছিল। এছাড়া বইমেলা বন্ধ থাকার নজির নেই। তবে কোভিড মহামারীর সময় ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে বইমেলার সময় পরিবর্তন করে মার্চ মাসে নেওয়া হয়েছিল।
সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

