রক্ত, মাংস, হাড়, শিরা ও অদৃশ্য অনুভূতির এক রহস্যময় স্তম্ভ।
তার জন্ম যেন কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য নয়, বরং অজানার দিকে এক অবিরাম অভিযাত্রা।
প্রতিটি মানুষের শরীর, প্রতিটি রেখা, প্রতিটি দৃষ্টিতে লুকিয়ে থাকে এক অনন্য প্রতীক।
হাতের রেখা যেমন আলাদা, তেমনি আলাদা প্রতিটি মানুষের নিয়তি—
ভিন্ন ভিন্ন ভয়ের, আকাঙ্ক্ষার, ভালোবাসার ও বিষাদের গল্পে গাঁথা।
মানুষের মুখের হাসির আড়ালেও অদৃশ্য থাকে অগণিত প্রশ্ন,
যার উত্তর সে খোঁজে—জীবনের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি ক্ষণে।
মানুষ জানে না, তার জন্ম কোনো চিরন্তন উল্লাসের জন্য নয়;
বরং একদিন বিলীন হওয়ার, মাটির বুকে নীরবে মিশে যাওয়ার জন্যই।
তবুও সে বাঁচে, ভালোবাসে, লড়াই করে;
ভাঙতে ভাঙতে আবার গড়ে তোলে নিজেকে,
যেন নশ্বরতার মাঝেই সে অমরতার সন্ধান করছে।
ভালোবাসার দেয়ালে নিজেকে বন্দি করে মানুষ ভাবে, সে মুক্ত;
অথচ সেই ভালোবাসাই ধীরে ধীরে তার চারপাশে নির্মাণ করে এক অদৃশ্য কারাগার।
সেই কারাগারের ভেতরে মানুষ খোঁজে মুক্তি, খোঁজে অর্থ, খোঁজে নিজের ছায়া—
যা বারবার তার কাছ থেকে সরে যায়, যেমন সময় সরে যায় হাতের মুঠো থেকে।
মানুষ, তুমি এক অনন্য আবিষ্কার—
নিজেরই অজানার পথে হারিয়ে যাওয়া এক নাবিক,
যে কখনও জানে না তার গন্তব্য কোথায়, তবু যাত্রা থামায় না।
তুমি সৃষ্টি করো, আবার ধ্বংস করো; তুমি ভালোবাসো, আবার ঘৃণাও করো।
তোমার চোখে যে আলো জ্বলে, তা একদিকে জ্ঞানের দীপ্তি,
অন্যদিকে অন্ধকারেরও প্রতিচ্ছবি।
তোমার হৃদয়ে যে সুর বাজে, তা আনন্দ ও বেদনার এক অবিচ্ছেদ্য সিম্ফনি।
তুমি যত বড় হও, ততই উপলব্ধি কর—নিজেকে জানা মানেই এক অবিরাম অন্ধকারে প্রবেশ।
মানুষ বাঁচে অপেক্ষায়, আর অপেক্ষা বাঁচে আসায়।
এই অপেক্ষাই হয়তো তার সবচেয়ে বড় শক্তি,
যার ভেতর লুকিয়ে আছে টিকে থাকার অনুপ্রেরণা।
মানুষ জানে, প্রতিটি প্রাপ্তিই ক্ষণস্থায়ী, তবু সে প্রতীক্ষা করে পরবর্তী প্রাপ্তির;
যেন অপেক্ষাই জীবনের মূল সুর, আর আশা তার নীরব প্রার্থনা।
অপেক্ষার এই প্রহরগুলোই মানুষকে শেখায় ধৈর্য, শেখায় ত্যাগ, শেখায় নিজেকে চেনা।
শেষ পর্যন্ত মানুষ বুঝতে শেখে—
সে কেবল মাংস ও রক্তের নয়, অনুভূতিরও এক মহাবিশ্ব।
তার ভেতরে যেমন আছে দহন, তেমনি আছে নির্মল আলো।
তার হাসির ভিতর লুকিয়ে থাকে নীরব কান্না,
তার নীরবতার ভিতর জন্ম নেয় হাজারো অসমাপ্ত কবিতা।
মানুষ মুখোশ পরে বাঁচে, কারণ নগ্ন সত্য তার পক্ষে সহ্য করা কঠিন।
তবু সেই মুখোশের আড়ালেই জেগে থাকে তার প্রকৃত আত্মা—
যে আত্মা ভালোবাসায় জ্বলে, বেদনাতে দীপ্ত হয়,
আর সময়ের গহ্বরে লিখে যায় নিজের নাম।
তুমি জানো না, মানুষ—
তোমার নশ্বর দেহের ভিতরেই অমরতার বীজ লুকিয়ে আছে।
তুমি ধ্বংসের ভেতর দিয়েই সৃষ্টি করো চিরকালকে।
তোমার প্রতিটি নিশ্বাসই এক সাক্ষ্য—
যে জীবন ক্ষণিক হলেও, তার অর্থ অনন্ত।

