logo
ads

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশকাল: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১৩ পি.এম
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ

অপরাজেয় বাংলার সামনে শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়েছে বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ। শনিবার বেলা ১১টার পর মরদেহ সেখানে নেওয়া হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে মরদেহ নেওয়া হয়। 

অপরাজেয় বাংলায় ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাবেক সহকর্মী ও প্রজন্মের সাহিত্যপ্রেমীরা। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, ইংরেজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য, যেখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে তাঁকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।


শেষ যাত্রায় শোকের ঢল

গতকাল শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এর আগে তিনি ৩ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইউল্যাব ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছে। হৃদ্‌যন্ত্রে রিং পরানো হলেও তিনি আর সেরে ওঠেননি।


এক অনন্য সাহিত্যনন্দন জীবন

১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটসের ওপর পিএইচডি করেন। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন এবং অবসরের পর যোগ দেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব)


সাহিত্যজগতে ‘জাদুবাস্তব’ ধারার পথিকৃৎ

গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধে বাস্তব ও অবাস্তবের মিশেলে এক অনন্য জাদুবাস্তবতার ধারা সৃষ্টি করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তাঁর ‘প্রেম ও প্রার্থনার গল্প’ ২০০৫ সালে প্রথম আলো বর্ষসেরা সৃজনশীল বইয়ের পুরস্কার অর্জন করে। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে একুশে পদক লাভ করেন। সাহিত্য, নন্দনতত্ত্ব ও সমাজচিন্তায় তাঁর অবদান বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজে এক আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাজিন আজিজ চৌধুরীর ভাষ্যে 

“মনজুরুল স্যার শুধু আমাদের শিক্ষক নন, ছিলেন চিন্তার মুক্তির প্রতীক। তাঁর ক্লাসে আমরা সাহিত্য নয়, জীবন পড়েছি।”


দেশের সাহিত্য ও শিক্ষাঙ্গনে অপূরণীয় শূন্যতা রেখে বিদায় নিলেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম— একজন মুক্তচিন্তার শিক্ষক, এক জনমপ্রেমিক গল্পকার, যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শেখাতে চেয়েছেন কীভাবে মানুষ হতে হয়।

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ