logo
ads

চীন বিপ্লবের ৭৬তম বার্ষিকী : দীর্ঘজীবী হোক চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী

এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া

প্রকাশকাল: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:০৩ পি.এম
চীন বিপ্লবের ৭৬তম বার্ষিকী : দীর্ঘজীবী হোক চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী

ফাইল ছবি

চীন বিপ্লবের ৭৬তম বার্ষিকী। চীনের জাতীয় দিবস। ১৯৪৯ সালের এই দিনে চীনের মহান নেতা মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে সফল বিপ্লবের পর ‘পিপলস রিপাবলিক অব চায়না’র আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ উপলক্ষে চীনের জনগণকে অভিনন্দন।

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে যে দলই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকুক, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির সঙ্গে আন্তরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক সবাই রক্ষা করতে চায়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে সচেষ্ট সবাই। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধ দেশটি সঙ্গত কারণেই এখন বাংলাদেশের বাণিজ্য ও উন্নয়নের প্রধান অংশীদারে পরিণত হয়েছে।

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক হলো দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক প্রাচীন ও প্রায় তিন হাজার বছরের পুরনো বলে ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন। বাঙালি সভ্যতা ও চীনা সভ্যতার মাঝে খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে থেকে যোগাযোগ আছে। প্রাচীনকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদীর মাধ্যমে চীন এবং বাংলায় মানুষের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে চীন-বাংলাদেশের আধুনিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার হলো চীন। আর বাংলাদেশ চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক পক্ষ।

ঐতিহাসিকরা বলে থাকেন, বাংলাদেশকে চীনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল যে পথ, তার নাম ইতিহাসে প্রসিদ্ধ সিল্ক রোড। ছিল পশ্চিমা সিল্ক রোড, যার সূচনা হয়েছিল রাজধানী সিয়ান (তৎকালীন ছাংআন) থেকে। সেই পথ সিনজিয়াং হয়ে আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে ভারত হয়ে পৌঁছেছিল বাংলাদেশে (মংচিয়ালা)। কয়েক শতাব্দী ধরে এই মংচিয়ালাই ছিল চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যকার সম্পর্কের সেতুবন্ধন। একটি পূর্ব সিল্ক রোডও ছিল, যার উৎপত্তি হয়েছিল দক্ষিণ চীনের কুনমিং থেকে। মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে তা সংযোগ স্থাপন করেছিল বাংলাদেশের সঙ্গে। এই দুটি পথ ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল, বৃদ্ধি পেয়েছিল সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান।

প্রাচীনকাল থেকেই চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই সমুদ্র উপকূলীয় দেশ বিধায় সমুদ্রপথে তাদের মধ্যকার আদান-প্রদান ছিল চমৎকার। প্রায় ৬০০ বছর আগে চীনের মিং রাজবংশের পরাক্রমশালী সম্রাট ছিলেন ইয়ংলে। সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ নাবিক অ্যাডমিরাল ঝেং হে ছিলেন সম্রাটের শান্তির দূত; তিনি ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগর পরিভ্রমণ করেন। তিনিই সমুদ্রপথে চীনা সিল্ক রোড সৃষ্টি করেন। ১৪০৫–৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অ্যাডমিরাল ঝেং হে শতাধিক জাহাজের বিশাল বহর নিয়ে সাতটি আন্তঃসমুদ্র অভিযান পরিচালনা করেন এবং এশিয়া ও আফ্রিকার ৩০টি দেশ ও অঞ্চল পরিভ্রমণ করেন। তার নৌবহর দুবার চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। বাংলার শাসক সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ তার রাজধানী সোনারগাঁয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানান চীন থেকে আসা অ্যাডমিরালকে।

সুলতান পরবর্তী সময়ে একটি দীর্ঘ-গ্রীবার জিরাফসহ মূল্যবান নানা উপহার পাঠান মিং রাজার দরবারে। চীনা ঐতিহ্য অনুসারে জিরাফকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে চীন নৌ ও স্থলশক্তিতে অত্যন্ত বলবান দেশ হওয়া সত্ত্বেও সমগ্র ইতিহাসে চীন অন্য কোনো দেশে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করেনি, অন্য কোনো দেশ দখল করে নেয়নি। বরং সব দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এসেছে।

আজ অস্থির বিশ্ব শান্তিবাদী, সাম্যবাদী, প্রগতিবাদী গণচীনের দিকে তাকিয়ে আছে। চীনের কাছে উচ্চ প্রত্যাশা সবার। বিশ্বের শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা এবং মানবজাতির উন্নয়ন ও প্রগতিতে চীন অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। মাও সেতুং বলেছিলেন, ‘গোটা বিশ্ব চীনের বন্ধু।’ আগামী দিনে চীন যেমন শান্তি, অগ্রগতি ও মর্যাদার গৌরবে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে, তেমনি বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী সব দেশ, সমগ্র এশিয়া অঞ্চল তথা সমগ্র বিশ্বকে শান্তিময়, সম্প্রীতিরময়, কল্যাণময়, মঙ্গলময়, নান্দনিক করে তুলতে প্রভূত অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস।

মহান গণচীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভদিনে আমাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন। জয় হোক গণচীনের। জয় হোক গণচীনবাসীর। দীর্ঘজীবী হোক চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী।

(লেখক: রাজনীতিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক)
E-mail: gmbhuiyan@gmail.com

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ