বিজয়া দশমী বাঙালি হিন্দু সমাজের এক অনন্য উৎসব, যা শুধু ধর্মীয় দিক থেকে নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমীতে এই দিন পালিত হয়। “বিজয়া” শব্দের অর্থ জয় এবং “দশমী” মানে দশম দিন। অর্থাৎ বিজয়া দশমী হলো শুভ শক্তির অশুভ শক্তির উপর বিজয়ের দিন।
পুরাণে বলা হয়, অসুররাজ মহিষাসুর দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গলোকে আধিপত্য বিস্তার করলে দেবতারা সম্মিলিত শক্তি থেকে দেবী দুর্গাকে সৃষ্টি করেন। দুর্গা নয় রাত ধরে মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ করে দশমী দিনে তাকে বধ করেন। তাই এই দিনটিকে শুভশক্তির চূড়ান্ত জয় হিসেবে গণ্য করা হয়। আবার রামায়ণ কাহিনি মতে, শ্রী রামচন্দ্রও এই দিনে রাবণকে পরাজিত করেছিলেন। যুদ্ধের আগে তিনি দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন, যা অকাল বোধন নামে পরিচিত। এই কারণে বিজয়া দশমীকে রামচন্দ্রের বিজয়ের স্মৃতিও বলা হয়।
এই দিনে দুর্গাপূজার সমাপ্তি ঘটে। সকালবেলা দেবীর পূজা ও অঞ্জলি দিয়ে দিন শুরু হয়। পরে দেবীকে বিদায় জানানোর জন্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় নদী বা জলাশয়ে। প্রতিমা বিসর্জনের আগে নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন, যা সিঁদুর খেলা নামে পরিচিত। প্রতিমা বিসর্জনের পর থেকেই শুরু হয় বিজয়া পালা। ছোটরা বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে, সবাই একে অপরকে মিষ্টি খাওয়ায় এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে “শুভ বিজয়া” বলে।
বিজয়া দশমী কেবল ধর্মীয় আচার নয়; এটি একটি সামাজিক মিলনমেলা। এদিন মানুষ সব ভেদাভেদ ভুলে মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়। স্নেহ, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে সবাই একত্রিত হয়। এভাবেই এই দিনটি অসুরের বিনাশের পাশাপাশি মানব সমাজে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে আসে।
সারকথা, বিজয়া দশমী আমাদের শেখায় যে অশুভ যতই শক্তিশালী হোক, শুভ শক্তির জয় অবশ্যম্ভাবী। তাই এই দিন শুধু পূজা-পার্বণের সমাপ্তি নয়, বরং ন্যায়ের জয়, সত্যের প্রতিষ্ঠা এবং সমাজে সম্প্রীতির অঙ্গীকারের প্রতীক।

