logo
ads

কেন ভারতের সঙ্গে তালিবান বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ

মিণ্টু বালা

প্রকাশকাল: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২৬ পি.এম
কেন ভারতের সঙ্গে তালিবান বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি

আগামী ৯ থেকে ১৬ অক্টোবর ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি সফর করবেন। এই সফর সংরক্ষিত হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (UNSC) নিষেধাজ্ঞা কমিটির বিশেষ ছাড়ের মাধ্যমে। মুততাকীর আগের সেপ্টেম্বরের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এই সফর কার্যকর হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সফরের প্রেক্ষাপট এবং গুরুত্ব বোঝার জন্য আমাদের জানতে হবে গত চার বছরে ভারতের তালিবান-নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কিভাবে বিবর্তিত হয়েছে।

২০২১ সালের ভারতের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া

আগস্ট ২০২১-এ তালিবান ক্ষমতায় আসার পর ভারত দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছিল। দেশের দূতাবাস ও কনসুলেট বন্ধ করা, ভিসা বাতিল করা এবং নাগরিকদের প্রত্যাহার—এই উদ্যোগগুলি সেই সময়ের কনট্রোলড রেসপন্স হিসেবে ধরা যায়। যদিও শুরুতে তালিবান সরকারকে ভারতের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, পরবর্তীতে ঢাকার কূটনীতিকদের মাধ্যমে কিছুটা সংলাপ শুরু হয়।

দুবাইতে বৈঠক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি

২০২৫ সালের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মুততাকীর সঙ্গে দুবাইয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে মানবিক সহায়তা, চাবাহার বন্দর ব্যবহারের গুরুত্ব এবং বাণিজ্য-সহ সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলা এবং পালগাম হামলার পর এই সংলাপগুলো ভারতের কূটনীতিকদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে।

ভারতের কৌশলগত প্রেক্ষাপট

ভারতের আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মূলত ঐতিহাসিক ও সভ্যতাগত বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে হলেও, সীমান্তের নিরাপত্তা উদ্বেগ সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ। তালিবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর অ্যাল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভৃতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তার জন্য আশঙ্কা তৈরি করেছিল। এই কারণে, নয়া দিল্লি ধাপে ধাপে তালিবান সরকারের সঙ্গে প্রগম্যাটিক ও টেকনিক্যাল এঙ্গেজমেন্ট শুরু করে।

পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা এবং ভারতের সুযোগ

তালিবান-ভারতের সংলাপ পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের তিক্ত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের কৌশল হলো তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে আফগান জনগণের কল্যাণ এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে চাবাহার বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা এবং অবকাঠামো প্রকল্পগুলো চালু রাখার সুযোগ পাচ্ছে ভারত।

ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

মুততাকীর সফরে আশা করা হচ্ছে তালিবান-নিয়ন্ত্রিত আফগান দূতাবাসে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা। নতুন ভিসা, বিনিয়োগ ও অবকাঠামো প্রকল্প পুনরায় চালু করার অনুরোধ। ভারতের নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করার নিশ্চয়তা নেওয়া।

ভারতের সঙ্গে তালিবানের সংলাপ কেবল কূটনৈতিক নয়, এটি আফগান জনগণের প্রতি সহায়তার মাধ্যম হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। তবে নারী ও সংখ্যালঘুদের ওপর কড়া বিধিনিষেধ কমানোর জন্য ভারতের প্রভাব সীমিত হলেও, দায়িত্বশীল কূটনীতির মাধ্যমে এটিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা হবে।

তালিবান সফর ভারতের জন্য কৌশলগত ও মানবিক দুইটি দিকেই গুরুত্বপূর্ণ। আফগান জনগণের জন্য সহায়তা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে এই সফর নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।

সূত্র: ORF (অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন), আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা

লেখক: মিন্টু বালা, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক বর্তমান বাংলা 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ