বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে উঠেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ ও দায়িত্ববোধের ওপর। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত— এই শিক্ষকগোষ্ঠীই জাতির সন্তানদের আলোকিত পথে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই শিক্ষক সমাজ আজও প্রাপ্য মর্যাদা ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার ঘোষণার পরও শিক্ষকদের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন এখনো জারি হয়নি। অথচ এই দাবিগুলো কেবল আর্থিক নয়— এটি শিক্ষকদের অস্তিত্ব, মর্যাদা ও জীবনের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
আগামী ১২ অক্টোবর (রোববার) এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের উদ্যোগে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হবে। তাঁদের স্পষ্ট ঘোষণা—
“আমরা সমান কাজ করি, কিন্তু সমান মর্যাদা পাই না— এটা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অবিচার।”
এই কর্মসূচি কেবল ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন নয়; এটি রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আহ্বান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বারবার আশ্বাস দিয়েও তা রক্ষা না করায় শিক্ষক সমাজের ক্ষোভ এখন চরমে পৌঁছেছে।
রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি তখনই আসে, যখন শিক্ষকের মনোবল ভেঙে যায়। কারণ শিক্ষকই সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। তাঁরা যদি অনিশ্চয়তা ও অবমাননায় ভোগেন, তবে শিক্ষার্থীরাও হারায় অনুপ্রেরণা— হারিয়ে যায় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণ।
আজ সময় এসেছে কথার নয়, বাস্তব পদক্ষেপের। কার্যকর প্রজ্ঞাপনই প্রমাণ করতে পারে রাষ্ট্র শিক্ষক সমাজের পাশে আছে। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতার ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা এখন সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
এখনও সময় আছে— শিক্ষক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া যায়। বিলম্ব মানেই শিক্ষাক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি, আর রাষ্ট্রের ভবিষ্যতে অস্থিরতা।
শিক্ষকই জাতির মেরুদণ্ড; কিন্তু সেই মেরুদণ্ডকে অবহেলিত রেখে উন্নত রাষ্ট্র গড়া সম্ভব নয়। তাই শিক্ষক সমাজের এই অবস্থান কর্মসূচি আসলে জাতির সম্মান রক্ষার আন্দোলন—
একটি ন্যায্যতার, সম্মানের এবং দায়িত্ববোধের লড়াই।
লেখক:
শিক্ষক ও সাংবাদিক
সাধারণ সম্পাদক, মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাব
মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর
???? sharifsstyle@gmail.com

