পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহড়া এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস এবং সম্প্রদায়ের প্রস্তুতি জোরদারের লক্ষ্যে আয়োজিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মতো দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।সোমবার (১৩ অক্টোবর, ২০২৫) দুপুর ১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসটি জাতিসংঘের ঘোষণায় ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতি বছর ১৩ অক্টোবর পালিত হয়, যার লক্ষ্য দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো এবং সম্প্রদায়কে আরও স্থিতিস্থাপক গড়ে তোলা। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত উদ্যোগ, প্রতিরোধ করি দুর্যোগ’ (Collective Action, Prevent Disasters), যা বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এবারের থিম ‘Fund Resilience, Not Disasters’ (দুর্যোগের পরিবর্তে স্থিতিস্থাপকতায় বিনিয়োগ করুন), যা দুর্যোগপূর্ব প্রস্তুতিতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অংশ ছিল অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় একটি বাস্তবসম্মত মহড়া। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট সদস্যরা অংশগ্রহণ করে অগ্নিনির্বাপণ, উদ্ধার কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রদর্শন করেন। এই মহড়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের সদস্য এবং সাধারণ নাগরিকরা অংশ নিয়ে দুর্যোগের সময় কীভাবে দ্রুত সাড়া দেওয়া যায় তা শিখেছেন। পটুয়াখালীর মতো অঞ্চলে, যেখানে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং কৃষিভিত্তিক জীবিকা প্রধান, অগ্নিকাণ্ড একটি গুরুতর ঝুঁকি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে, যা এই ধরনের প্রশিক্ষণকে আরও জরুরি করে তুলেছে।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম। তিনি দুর্যোগ প্রশমনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক সরঞ্জামের ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেন। সভায় অন্যান্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মোস্তফা মাইদুল মোর্শেদ মুরাদ, যিনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ভূমিকা এবং স্থানীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
সভায় অংশগ্রহণকারী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অগ্নিনির্বাপণের প্রক্রিয়া এবং জরুরি চিকিৎসা নিয়ে ব্যবহারিক টিপস শেয়ার করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এই ধরনের অনুষ্ঠান স্থানীয় সম্প্রদায়কে দুর্যোগের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই দিবসটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়েছে, যাতে স্থানীয় সকল স্তরের মানুষ অংশ নিতে পারেন।
বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর একটি, যেখানে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নিকাণ্ড এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের মাধ্যমে সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। এই বছরের অনুষ্ঠানগুলোতে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়েছে সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর, যাতে সরকারি, বেসরকারি এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ একত্রিত হয়। পটুয়াখালীর মতো উপকূলীয় জেলায় এই অনুষ্ঠানগুলো স্থানীয় জনগণকে অগ্নিকাণ্ড এবং অন্যান্য দুর্যোগের মোকাবিলায় আরও সক্ষম করে তুলবে।
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাউফলের স্থানীয়রা দুর্যোগ প্রতিরোধে নিজেদের ভূমিকা পালনের প্রতিজ্ঞা নিয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মতে, এই ধরনের কর্মসূচি দেশব্যাপী চালিয়ে যাওয়া হবে, যাতে সকলের অংশগ্রহণে একটি দুর্যোগমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা যায়।

