কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫ যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়েছে। “সমন্বিত উদ্যোগে, প্রতিরোধ করি দুর্যোগ” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার (১৩ অক্টোবর) দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠান দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রস্তুতির গুরুত্ব তুলে ধরে এবং বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
সকাল ১০টায় চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়। র্যালিতে অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা, পুলিশ প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। র্যালির মাধ্যমে দুর্যোগ প্রশমনের বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
র্যালির পর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের একটি বাস্তবতা। তবে সমন্বিত সচেতনতা, পরিকল্পিত প্রস্তুতি এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব।” তিনি আরও জানান, চকরিয়ার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আলোচনা সভায় বক্তারা দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, স্থানীয় প্রস্তুতি জোরদার এবং দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণের ওপর আলোকপাত করেন। বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী, এই ধরনের আলোচনা সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং দুর্যোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়, যার মধ্যে ছিল:
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী: স্থানীয় পর্যায়ে দুর্যোগ প্রশমনের সরঞ্জাম এবং কৌশল প্রদর্শন।
- ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড মহড়া: ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অংশগ্রহণে বাস্তবসম্মত মহড়া, যা জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিখিয়েছে।
- সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ: দুর্যোগ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে তথ্য সম্বলিত লিফলেট সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ।
- চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা: স্কুল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দুর্যোগ সচেতনতার বিষয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক।
চকরিয়ার স্থানীয় বাসিন্দারা উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “এই ধরনের মহড়া এবং আলোচনা আমাদের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত করছে। আমরা এখন জানি, ভূমিকম্প বা অগ্নিকাণ্ডের সময় কী করতে হবে।” আরেক বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, “নিয়মিত এমন কর্মসূচি হলে আমাদের গ্রামের মানুষ বেশি সচেতন হবে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমানো যাবে।”
বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর একটি, যেখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প এবং অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগ নিয়মিত ঘটে। চকরিয়া উপজেলা, যা কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই ঝুঁকি আরও বাড়ছে। আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২৫-এর আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্য “Fund Resilience, Not Disasters” (দুর্যোগের পরিবর্তে স্থিতিস্থাপকতায় বিনিয়োগ) এই অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, যেখানে দুর্যোগ প্রতিরোধে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সম্প্রদায়ের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত এক দশকে দুর্যোগ প্রশমনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে, স্থানীয় পর্যায়ে আরও সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। চকরিয়ার এই আয়োজন সেই লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
চকরিয়ায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের আয়োজন স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়েছে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছে। নিয়মিত এ ধরনের কর্মসূচি এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চকরিয়া একটি দুর্যোগ-সহনশীল সম্প্রদায় গড়ে তুলতে পারে।

