logo
ads

বাংলাদেশে কলার বর্জ্য থেকে টেকসই পোশাক: কৃষি ও ফ্যাশনের নতুন সংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশকাল: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:১৫ এ.এম
বাংলাদেশে কলার বর্জ্য থেকে টেকসই পোশাক: কৃষি ও ফ্যাশনের নতুন সংযোগ

সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কলার বাগান বিস্তৃত। বরিশাল, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জাফলং অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কলা চাষ হয়। তবে ফসল কেটে নেওয়ার পর কলার ছদ্মকাণ্ড (pseudostem) সাধারণত ক্ষেতে ফেলে দেওয়া হয়। এটি শুধু বর্জ্য নয়, বরং পরিবেশ দূষণ এবং কৃষকদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ।
তাইওয়ানের উদ্যোক্তা নেলসন ইয়াং-এর ধারণা – কলার ছদ্মকাণ্ড থেকে টেক্সটাইল উৎপাদন – বাংলাদেশে প্রয়োগ করলে কৃষি ও ফ্যাশন শিল্পকে একত্রিত করার একটি নতুন পথ তৈরি হতে পারে। ইয়াং-এর কোম্পানি ফার্ম টু ম্যাটেরিয়াল ইনক. ইতিমধ্যেই তাইওয়ানে এই প্রযুক্তি চালু করেছে এবং ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি চলছে।

কলা ফাইবার উৎপাদন বাংলাদেশের জন্য একদিকে কৃষকদের অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ তৈরি করবে, অন্যদিকে বর্জ্য কমাবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি গাছ থেকে ১-২% শুকনো ওজন ফাইবার পাওয়া সম্ভব। কৃষকরা সহজ ম্যানুয়াল কাটিং পদ্ধতিতে ছদ্মকাণ্ড সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারেন।

সংগ্রহণ ও প্রস্তুতি: ছদ্মকাণ্ড থেকে বাইরের শেল বাদ দিয়ে মধ্যবর্তী অংশ নেওয়া হয়।
ফাইবার এক্সট্রাকশন: হালকা মেশিন বা ম্যানুয়াল যন্ত্র দিয়ে লম্বা ও ছোট ফাইবার আলাদা করা হয়।
প্রক্রিয়াজাতকরণ ও শুকানো: প্রাকৃতিক এনজাইম বা জল ব্যবহার করে ফাইবারকে নরম এবং শোষণযোগ্য করা হয়।

টেক্সটাইল উৎপাদন: ফাইবার ইয়ার্নে রূপান্তর করা হয়, যা তুলা বা অন্যান্য ফাইবারের সঙ্গে মিশিয়ে পোশাক, ব্যাগ বা হোম টেক্সটাইল তৈরি করা যায়।
তুলার তুলনায় ৯০% কম জল ব্যবহার।
কোনো কৃত্রিম সার বা পেস্টিসাইডের প্রয়োজন নেই।
বায়োডিগ্রেডেবল উপাদান, কম কার্বন ফুটপ্রিন্ট।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, “বাংলাদেশে কলার বর্জ্য ব্যবহার করলে টেকসই ফ্যাশন শিল্পের নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। কৃষকরা আর্থিকভাবে শক্তিশালী হবেন এবং পরিবেশ সংরক্ষণও হবে।”

এই উদ্যোগের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ফাইবারের স্থিতিশীল সরবরাহ এবং বাজারজাতকরণ। তবে স্থানীয় উদ্যোগ, বেসরকারি বিনিয়োগ ও সরকারী সহায়তার মাধ্যমে সম্ভাব্য উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, কেবল পোশাক শিল্প নয়, হোম টেক্সটাইল, ব্যাগ, সিঁড়ি কাভার, জুতা ও অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালেও কলা ফাইবার ব্যবহার করা যেতে পারে। স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের উদ্ভাবনী প্রকল্পে অংশ নিতে পারে।

কৃষক আব্দুল হাকিম (কিশোরগঞ্জ) বলেন, “আমরা সবসময় ছদ্মকাণ্ড ফেলে দিই। যদি এটিকে বিক্রি করতে পারি বা পোশাক তৈরি করা যায়, তাহলে আমাদের আয় বাড়বে, বাগান পরিষ্কার থাকবে, পরিবেশও রক্ষা হবে।”
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, বাংলাদেশের কৃষি-বর্জ্য থেকে তৈরি টেক্সটাইল কেবল দেশীয় বাজারে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতার যোগ্য হবে।
বাংলাদেশের জন্য এটি শুধু আর্থিক বা পরিবেশগত উদ্যোগ নয়, এটি কৃষি ও ফ্যাশন শিল্পকে একত্রিত করে নতুন উদ্ভাবনের পথ খোলার একটি দৃষ্টান্ত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ