logo
ads

অসহায়দের ঘরে আশার ছাদ: চৌদ্দগ্রামে টিনের উষ্ণ স্পর্শ

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৭ এ.এম
অসহায়দের ঘরে আশার ছাদ: চৌদ্দগ্রামে টিনের উষ্ণ স্পর্শ

বর্তমান বাংলা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়াড়ের পশ্চিম ডেকরা গ্রাম যেন বৃষ্টির মেঘে ঢাকা এক নীরব কান্নার মতো ছিল, যেখানে অসহায় পরিবারগুলোর টালি ঘর থেকে ঝরে পড়তো পানির ফোঁটা, আর রাতের অন্ধকারে জেগে উঠতো ভয়ের ছায়া। কিন্তু ৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সেই গ্রামের হাওয়ায় ভেসে এলো এক নতুন আশার সুবাস—মাসুদা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর চ্যারিটির উদ্যোগে ১৩টি হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে ৩৫ বান্ডেল টিন বিতরণের মাধ্যমে। এই টিনগুলো শুধু ধাতুর টুকরো নয়, একটি মায়াময় ছাদ যা বৃষ্টির তাণ্ডবে ভেঙে পড়া স্বপ্নগুলোকে আবার জুড়ে দিচ্ছে, আর অসহায় মানুষের চোখে জ্বালিয়ে দিচ্ছে কৃতজ্ঞতার আলো। ফেনী থেকে এসে, মাসুদা ট্রাস্টের বাংলাদেশ পরিচালক জামাল হোসেন শামীমের হাতে হাতে প্রতিটি পরিবারের দরজায় পৌঁছে দিয়েছেন এই সহায়তা, যেন একটি নীরব প্রতিজ্ঞা যে, কোনো ঘর আর পানির শিকার হবে না।

ডেকরা গ্রামের এই অসহায় পরিবারগুলো—মৃত জলিলের স্ত্রী, কবির, রাবেয়া, গোরফান, বেলাল, শাহ আলম, রুহুল আমীন, সাইফুলসহ—যাদের জীবন যেন এক দীর্ঘ বর্ষার মতো কষ্টে ভরা, তাদের মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ফুল। টিন বিতরণের সেই মুহূর্তে, যখন জামাল হোসেন শামীম প্রতিটি বান্ডেল হাতে তুলে দেন, তখন গ্রামের বাতাসে মিশে যায় কান্না আর আনন্দের মিশ্রণ। স্থানীয় সমাজসেবক যুব নেতা একরামুল হক কুসুমের নেতৃত্বে নাসিব, কাজী মামুন, সোহেলসহ একদল তরুণ সেচ্ছাসেবক যেন একটি মানবিক শৃঙ্খল গড়ে তুলেছেন—তারা না থাকলে এই সহায়তা হয়তো আরও দেরি হতো। উপকারভোগী পরিবারগুলোর কণ্ঠে উঠে আসে কৃতজ্ঞতার সুর, “ঘর মেরামতের জন্য টিন পেয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। বৃষ্টি হলে পানি পড়ার কারণে ঘরে থাকতে পারতাম না, সারা রাত জেগে থাকতে হতো। এই টিনগুলো পেয়ে আমরা অনেক খুশি। আল্লাহ যেনো তাকে আরও বেশি বেশি দান করার তৌফিক দান করে।” এই কথাগুলো যেন একটি প্রার্থনা, যা বৃষ্টির পর সূর্যের মতো উষ্ণ।

একরামুল হক কুসুমের চোখে ঝলকে ওঠে সমাজের এক গভীর সত্য—“মাসুদা ট্রাস্ট ফর চ্যারিটির চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন বাবুর মতো যদি ধানশীল ব্যক্তিরা গরিবদের সহযোগিতা করতো, তাহলে এলাকায় অসহায় গরিব ব্যক্তিরা এতো কষ্ট করতোনা। নাছির উদ্দীন বাবু সহায়তায় অসংখ্য পরিবার আজ উকৃত হচ্ছে। সে জন্য নাছির উদ্দীন বাবু কে ধন্যবাদ।” আর কুলাসার গ্রামের সমাজসেবক শামসুল আলম যোগ করেন, “মাসুদা ট্রাস্ট ফর চ্যারিটি সব সময় মানবতার কাজে গরিব, অসহায়দের পাশে আছে এবং থাকবে। সবাই নাছির উদ্দীন বাবু কে সাপোর্ট করে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।” এই কথাগুলো যেন একটি আহ্বান, যা সমাজের প্রত্যেক হৃদয়কে জাগিয়ে তোলে—দানের হাত যেন আরও প্রসারিত হয়, আর অসহায়দের কান্না রূপান্তরিত হয় হাসিতে।

উল্লেখ্য, মাসুদা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর চ্যারিটি দীর্ঘদিন ধরে গরিব অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়ে আসছে—চিকিৎসা সহায়তা থেকে বাসস্থান নির্মাণ, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ পর্যন্ত তাদের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই টিন বিতরণ যেন একটি ছোট্ট বীজ, যা পশ্চিম ডেকরা গ্রামের মাটিতে রোপিত হয়ে উঠবে এক বড় স্বপ্নের গাছে—যেখানে কোনো পরিবার আর বৃষ্টির ভয়ে কাঁপবে না, বরং আকাশের নীলিমায় দেখবে নতুন জীবনের আলো। এমন উদ্যোগ যেন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মানবতার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সেই হাত যা অন্ধকারে আলো জ্বালায়, আর কষ্টের মাঝে আশার ছায়া বিছায়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ