জয়পুরহাটের মাটি যেন এবার সবুজ সোনায় ঝলমল করছে—শশার বাম্পার ফলন কৃষকদের মুখে ফুটিয়েছে স্বস্তির হাসি, হৃদয়ে জাগিয়েছে সমৃদ্ধির আলো। প্রান্তিক চাষীদের হাতে এখন লাভের ফসল, যেন প্রকৃতি নিজেই তাদের পরিশ্রমের প্রতিদান দিচ্ছে। ভাদসা ইউনিয়নের গোপালপুর বাজারে শশার পাইকারি বাণিজ্যে উঠেছে জোয়ার, যেখানে প্রতিদিন ২০-২৫ ট্রাক শশা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে পাড়ি জমাচ্ছে, বয়ে নিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির বার্তা।
গোপালপুর বাজারে পা রাখলেই চোখে পড়ে প্রাণচাঞ্চল্যের ছবি—পাইকাররা শশার স্তূপ গড়ছে, কেউ বস্তায় ভরে ট্রাক লোডের তোড়জোড়ে ব্যস্ত। মহুরুল গ্রামের চাষি মো. রবিউল ইসলামের চোখে-মুখে উদ্দীপনার ঝিলিক। তিনি বলেন, “১০ কাঠা জমিতে শশা লাগিয়েছি। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই মণ শশা পাচ্ছি। দূর থেকে এসেও গোপালপুরে বিক্রি করি, কারণ দাম ভালো। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার শশা বিক্রি হয়েছে, আরও ৪০ হাজার টাকার আশা করছি।” তার কণ্ঠে সেই আনন্দ, যেন ফসলের প্রতিটি শশায় লুকিয়ে আছে তার স্বপ্নের ফল।
অন্যদিকে, গোপালপুরেরই চাষি মো. রনির গল্পে মিশে আছে গত বছরের হতাশা আর এবারের উল্লাস। “গত বছর শশার ফলন ভালো হয়নি, খরচ উঠিয়ে কোনোমতে বেঁচেছি। এবার এক বিঘা জমিতে ফলন বাম্পার! এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার টাকার শশা বিক্রি করেছি, আরও ১ লাখ টাকার আশা করছি,” বলেন তিনি, চোখে-মুখে আশার আলো ঝরিয়ে। এই ফলন যেন শুধু ফসল নয়, তাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার সিঁড়ি।
চাষীদের কথায় জানা যায়, ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে শশার ফলন শুরু হয়, প্রথম মাসে উঠছে প্রচুর শশা, পরে আরও এক মাস ধরে ফলন চলে, যদিও পরিমাণ কিছুটা কমে। এবার বিঘাপ্রতি ৫-৬ মণ শশা মিলছে, যা কৃষকদের হৃদয়ে জাগাচ্ছে আনন্দের জোয়ার। পাইকাররা জানান, বর্তমানে প্রতি মণ শশা ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, দামের এই ওঠানামা তাদের জন্যও লাভের হাওয়া বয়ে আনছে।
ভাদসা, কোঁচকুড়ি, দূর্গাদহ, রসুলপুর, ফরিদপুর, চক-কামালসহ জয়পুরহাটের প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে এবার শশার চাষ হয়েছে। লাভজনক এই ফসল কৃষকদের মনে জাগিয়েছে নতুন উৎসাহ—যেন প্রতিটি শশা তাদের পরিশ্রমের প্রতি প্রকৃতির ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। এই বাম্পার ফলন শুধু জয়পুরহাটের কৃষকদের জন্য নয়, বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির জন্যও এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার আলো জ্বেলেছে, যা তাদের হৃদয়ে ছড়াচ্ছে স্বপ্ন আর সমৃদ্ধির অপার আনন্দ।

