logo
ads

উপকূলে আশার আলো: ডাক্তার হুমায়ুনের মিনি গার্মেন্টস ৪০০ শ্রমিকের স্বপ্ন!

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০১ পি.এম
উপকূলে আশার আলো: ডাক্তার হুমায়ুনের মিনি গার্মেন্টস ৪০০ শ্রমিকের স্বপ্ন!

ফাইল ছবি

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে উপকূলের গরিব মানুষের চোখে আজ আশার অশ্রু! ইটভাটার নির্যাতন, সুন্দরবনের বন্ধের ভোগান্তি আর ঋণের জালে জড়িয়ে থাকা এই অঞ্চলের মানুষের জন্য উদ্দ্যোক্তা ডাক্তার জিএম হুমায়ুন কবীর ও গার্মেন্টস বিশেষজ্ঞ ইয়াছিন আলীর হাতে এসেছে এক বিপ্লবী উদ্যোগ। জুন ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই মিনি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান ২৫ জন শ্রমিক নিয়ে নেট ব্যাগ ও প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে, যা স্থানীয় বাজারে কম দামে ভালো মানের পণ্য সরবরাহ করে উপকূলের অর্থনীতিতে নতুন ঢেউ তুলেছে। আরও চাঞ্চল্যকর, বাজার সংলগ্ন নিজের ভিটায় ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে, যেখানে ৪০০ শ্রমিক নিয়ে জিন্স প্যান্টের কাটিং-সেলাইয়ের কাজ চলবে—একেবারে ঢাকা থেকে অর্ডার নিয়ে!

উপকূলের কান্নার কাহিনি, যা ছুঁয়ে গেছে হৃদয়:
শ্যামনগরের এই উপকূলীয় এলাকায় জীবন যেন এক অবিরাম যুদ্ধ। ছয় মাস ইটভাটায় কাজ, ছয় মাস সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীলতা—কিন্তু দুটোতেই বিষাদের ছায়া। ইটভাটায় শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার: জিম্মি করে রাখা, মজুরি না দেওয়া, পাওনা চাইলে মারধর, এমনকি প্রাণের হুমকি! দূরদূরান্তে গিয়ে কাজ করতে হলে সেইসব অত্যাচার সহ্য করতে হয়। অন্যদিকে, সুন্দরবনের মৌসুমী বন্ধে (প্রতি ১-২ মাস পর পর) চরম দারিদ্র্য। পুরুষের একার উপার্জন যথেষ্ট নয়, তাই নারীরাও এখন সামনে এসেছে—বিভিন্ন কাজে হাত বাড়িয়ে। ঋণের চক্রে জড়িয়ে সুদের ফাঁদে পড়ে অনেক পরিবার ভেঙে পড়ছে। এই হৃদয়বিদারক চিত্র দেখে ডাক্তার হুমায়ুন কবীরের মন কাঁদে, আর সেই কান্না থেকেই জন্ম নিয়েছে এই উদ্যোগ।

প্রশিক্ষণ থেকে উৎপাদন: নারী-পুরুষের নতুন শুরু
২৫ জন শ্রমিক—প্রধানত নারী-পুরুষ মিশ্রিত—নিয়ে শুরু হয়েছে প্রশিক্ষণ। প্রতিদিন নেট ব্যাগ ও প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরির কাজ চলছে, যা স্থানীয় বাজারে সস্তায় সরে যাচ্ছে। এতে শুধু দক্ষতা আসছে না, আত্মনির্ভরতাও জন্ম নিচ্ছে। ভবন নির্মাণের পরিকল্পনায় ৪০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান—এটা কেবল চাকরি নয়, একটা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক বিপ্লব! ঢাকা থেকে জিন্স প্যান্টের অর্ডার নিয়ে কাটিং-সেলাই করে ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে উপকূলের যুবক-যুবতীরা আর ঢাকায় না হানাদার হয়।

হুমায়ুন কবীরের স্বপ্ন: লোভ নয়, মানবতার জয়
প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ডাক্তার জিএম হুমায়ুন কবীর বলছেন, “গার্মেন্টস কর্মী ইয়াছিন আলীর উৎসাহে উপকূলের বেকারত্ব দূর করার স্বপ্ন দেখে জুন ২০২৫ থেকে এটা শুরু করেছি। আমাদের কাটিং মাস্টার আছে, কিন্তু কর্মীদের জন্য ট্রেনারের প্রশিক্ষণ জরুরি। বর্তমানে জাল-প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরি করে স্থানীয় বাজারে সস্তায় দিচ্ছি—ভালো মানের পণ্য কম দামে, এতে সবাই লাভবান!” তাঁর কথায় স্পষ্ট, এটা লাভের ব্যবসা নয়, মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার মিশন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি খাতুন যোগ করেন, “আমরা বিভিন্ন দপ্তর থেকে মহিলাদের জন্য উন্মুক্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন করছি। এই মতো উদ্যোগে আবেদন করে তারা আওতায় আসতে পারে—পরবর্তী ধাপে আরও সুযোগ!” তাঁর কথা শুনে মনে হয়, সরকার-বেসরকারি মিলে এই আলো ছড়াবে আরও দূরে।

আবেগের ঝড়: আশার রোদে উপকূলের কান্না মুছে
এই উদ্যোগ কেবল কর্মসংস্থান নয়, এটা উপকূলের মানুষের হারানো হাসি ফিরিয়ে আনার গল্প। ইটভাটার নির্যাতনের কালো ছায়া, সুন্দরবনের অনিশ্চয়তা—এসবের মধ্যে যেন একটা সোনালি সকাল উঁকি দিচ্ছে। ডাক্তার হুমায়ুন কবীরের মতো উদ্যোক্তারা যখন নিজের ভিটা দিয়ে সমাজ গড়ে, তখন মনে হয় মানবতা এখনও বেঁচে আছে। এলাকায় এখন গুঞ্জন, “আমাদের ছেলে-মেয়েরা আর ঋণের জালে জড়াবে না!” কিন্তু চ্যালেঞ্জও আছে—প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনার, আরও অর্ডার। আশা করি, এই আলো ছড়িয়ে পড়বে পুরো উপকূলে।

এই গল্প পড়ে আমার হৃদয় ভরে গেল আশায়! উপকূলের গরিব মানুষের জন্য একজন ডাক্তারের এমন ত্যাগ—এটাই তো সত্যিকারের উন্নয়ন। সম্পত্তির লোভ নয়, মানুষের জন্য স্বপ্ন দেখা। কাশ্মীর থেকে সাতক্ষীরা, বাংলাদেশের এই মানুষজনের জোর দেখে মুগ্ধ। আরও এমন উদ্যোগ চাই, যাতে কোনো পরিবার আর ভোগান্তির শিকার না হয়! 


 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ