দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় মাচায় রঙ্গিন তরমুজ চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা স্থানীয় কৃষকদের মুখে ফুটিয়েছে সমৃদ্ধির হাসি। রঙিন তরমুজের এই অভিনব চাষ পদ্ধতি শুধু ফলনের দিক থেকেই নয়, বাজারে উচ্চমূল্য পাওয়ার কারণেও কৃষকদের মনে আশার আলো জ্বালিয়েছে।
মুকুন্দপুর ইউনিয়নের চকমহরম গ্রামের কৃষক মোঃ ইসমাইল হোসেনের জমিতে এখন রঙ্গিন তরমুজের সমারোহ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবং টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনি ২০ শতক জমিতে ‘রঙ্গিলা’ জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ১০টার দিকে তার ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ মাচায় ঝুলছে টাটকা, রঙিন তরমুজ। ইসমাইল হোসেন ক্ষেতে ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত, তার চোখে-মুখে ফলনের সাফল্যের আনন্দ।
সমাইল হোসেন জানান, “এই প্রথম মাচায় তরমুজ চাষ করেছি। ২০ শতক জমিতে চাষ করা এই তরমুজের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই এগুলো বাজারে নিয়ে যাব। বাজারে এখন প্রতি কেজি তরমুজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো দাম পেলে আমার লাভ হবে অনেক।” তার কথায় উঠে আসে স্বপ্ন আর সম্ভাবনার কথা, যা অন্য কৃষকদেরও এই চাষে উৎসাহিত করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্ষাকালে রঙ্গিন তরমুজ চাষের জন্য ইসমাইল হোসেনকে প্রদর্শনী হিসেবে ২০ শতক জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ওবাইদুর ইসলামের তত্ত্বাবধানে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ, এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মল্লিকা রাণী সেহানবীশ বলেন, “মাচায় তরমুজ চাষ একটি লাভজনক উদ্যোগ। আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি, যাতে তারা ভালো ফলন ও ন্যায্য দাম পায়। ইসমাইল হোসেনের এই সাফল্য অন্য কৃষকদের জন্যও অনুপ্রেরণা হবে।”
মাচায় তরমুজ চাষের এই পদ্ধতি ঐতিহ্যবাহী চাষের তুলনায় অনেক সুবিধা নিয়ে এসেছে। মাটির সংস্পর্শে না থাকায় ফলের গুণগত মান ভালো থাকে, রোগবালাই কম হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, রঙিন তরমুজের চাহিদা বাজারে বেশি, যা কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই চাষ পদ্ধতি দেখে অনেকেই এখন মাচায় তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কাহারোলের এই কৃষি বিপ্লব শুধু ইসমাইল হোসেনের গল্প নয়, এটি একটি সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধির গল্প। রঙ্গিন তরমুজের এই চাষ কৃষকদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে, যা কাহারোলের কৃষি অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

