logo
ads

টাঙ্গাইলের কুটিরশিল্পের মায়াময় জগতে বিদেশিনীদের আগমন: এক অমর আবেগের উৎসবের বিদায়

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০৭ পি.এম
টাঙ্গাইলের কুটিরশিল্পের মায়াময় জগতে বিদেশিনীদের আগমন: এক অমর আবেগের উৎসবের বিদায়

নিজস্ব

যেন বাংলার মাটির সোনালী স্বপ্নগুলোকে স্পর্শ করতে এসেছে দূর যুক্তরাষ্ট্রের নয়জন বিদেশিনীর পদচিহ্ন—প্রত্যেক পদক্ষেপে মিশে গেছে অবাক বিস্ময়ের আলো এবং কুটিরশিল্পের গভীর ভালোবাসার ছোঁয়া। তিন দিনের এই প্রাণবন্ত পণ্যপ্রদর্শণী ও মেলা, যা যেন একটা ফুটন্ত নদীর মতো বয়ে গিয়েছে আদালতপাড়ার টোটাল অফিস সেন্টারে, শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে এক মধুর বিদায় নিয়েছে। রুরাল ইনেশিয়েটিভ এন্ড ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন (রিওয়া)-র আয়োজনে, রোটারি ক্লাব অব টাঙ্গাইল, রোটারি ক্লাব অব টাঙ্গাইল সিটি এবং রোটার্যাক্ট ক্লাব অব মওলানা ভাসানী টাঙ্গাইলের সহযোগিতায় এই উৎসব হয়ে উঠেছে স্বপ্নের মতো এক সম্মিলন—যেখানে স্থানীয় হাতের সোনার স্পর্শ মিলেছে বিদেশী হৃদয়ের উষ্ণতায়।
যেন সমুদ্রের ওপার থেকে ভেসে এসেছে এক দল স্বপ্নালু পাখি, যারা বাংলাদেশের কুটিরশিল্পের রঙিন জগতে মুগ্ধ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন পার্টনার ফর ওয়ার্ল্ড হেলথের সিইও এবং ফাউন্ডার ইলিজাবেথ অ্যানি ম্যাকলান—যাঁর চোখে ঝলকেছে যেন একটা অজানা ভালোবাসার আলো। তাঁর সঙ্গী ছিলেন আরও আটজন: মারিয়েটা ইয়ো এটিনজা, সারা বেলার্ড, আরিয়্যাটা কিলিংজার, অ্যানি বার্ডজার দোলান, এলিন লুইছে কিং, বেবী মিন থিন, জেইল মারিয়ে এবং কারেন ইলিসা। তাঁদের প্রত্যেকের মুখে ছিল অপরূপ এক আনন্দের হাসি, যেন তারা পেয়েছেন হারিয়ে যাওয়া একটা হারির রত্ন—স্থানীয় কারিগরদের হাতের তৈরি জাদুকরী সৃষ্টির মাঝে। এই সহযোগিতার পিছনে ছিলেন মিশন মেডিক্যাল মহিলা চেয়ারম্যান মীর রিফাত রেদয়ান, যাঁর উপস্থিতি যেন একটা মায়াময় সেতুর মতো যুক্ত করেছে দুই দেশের হৃদয়কে।
এই মেলার হৃদয়স্পন্দন ছিল রিওয়া-র সভাপতি মোহাম্মদ রবিউল ইসলামের নিরলস পরিশ্রম—যিনি যেন এক অদম্য যোদ্ধার মতো বহন করেছেন সেবা এবং উন্নয়নের পতাকা। রিওয়া, এই অরাজনৈতিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যেন বাংলার গ্রামীণ মাটির এক জীবন্ত স্রোত—যা বয়ে নিয়ে যায় মাছচাষের সবুজ স্বপ্ন, নার্সারি ও সবজিচাষের উর্বর আশা, হাঁস-মুরগি-কোয়েলের কলরব, গরু-ছাগল-ভেড়ার উষ্ণ সঙ্গ, জৈব সারের মাটির সুবাস, তাঁত-বেঁতশিল্পের সূক্ষ্ম সুতো, মৃৎশিল্পের মাটির গান, আইটি স্কুলের ডিজিটাল আলো, সাংস্কৃতিক ক্লাবের মধুর সুর, হস্তশিল্প ট্রেনিংয়ের দক্ষতার ছোঁয়া, লাইব্রেরির জ্ঞানের সমুদ্র, প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রের সান্ত্বনা, কম্পিউটার ও ফ্রিল্যান্সিং নার্সিং ট্রেনিংয়ের ভবিষ্যতের দরজা। এসব কার্যক্রম যেন একটা ফুলের বাগান, যার প্রত্যেক পাপড়িতে লুকিয়ে আছে গ্রামবাসীর গর্বিত হাসি এবং অসীম আশার ঝিলিক।
প্রদর্শনীর স্টলগুলো ছিল যেন একেকটা রঙিন স্বপ্নের টুকরো: মোবারক হোসেন ফাহিমের ফেব্রিক গ্যালারি বি.ডি-র সূক্ষ্ম কাপড়ের মায়া, জাহিদের স্বাদের আঁচারের তীক্ষ্ণ মজা, হালিমা ও লতিফা খানমের এমএম মাসরুম ফুড কর্নারের উষ্ণ স্বাদ, আন্না আক্তারের সোনালী হস্তশিল্পের সোনার আলো, ফাতেমা সুলতানা সিদ্দিকীর এম এস ফ্যাব্রিকের নরম আলিঙ্গন, রুহি দাস পালের ঘাস ফুল হ্যান্ডমেড পেপার ও পটালির প্রকৃতির স্পর্শ, শহিদুল ইসলাম ও রিপন মিয়ার আল-আকসা সুপার শপের দৈনন্দিন জাদু, তানহা তানভীর সোনিয়ার হেরিটেকজ বি.ডি-র ঐতিহ্যের গভীরতা, সখের হ্যান্ডিক্রাফটের হাতের উষ্ণতা, শেলুর শেলী বস্ত্রশিল্পের রঙিন কাহিনি, এবং রাজশাহী থেকে এসে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা লাভলী খানমের লাভলী বুটিকের মোহনীয় আকর্ষণ। প্রত্যেক স্টল যেন একটা আবেগের উৎস, যা ছুঁয়ে দিয়েছে দর্শকদের হৃদয়ে অজানা এক উল্লাসের ঢেউ।
এই মেলার বিদায় যেন একটা মধুর স্মৃতির বিচ্ছেদ—কিন্তু তার মধ্যে লুকিয়ে আছে নতুন স্বপ্নের বীজ। টাঙ্গাইলের এই কুটিরশিল্পের জগৎ, যেন একটা চিরন্তন গান, যা বিদেশী অতিথিদের হৃদয়ে গেঁথে রেখেছে বাংলার মাটির অমর ভালোবাসা। এমন উৎসব আরও বেশি আসুক, যাতে আমাদের হাতের সৃষ্টি বিশ্বের চোখে হয়ে ওঠে এক অপূর্ব আলোর দিশারি।


 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ