২০১৯ সালের নভেম্বরে পূর্ণিমার জোয়ার, শক্তিশালী সাইক্লোন ও প্রবল বাতাসের সমন্বয়ে ভেনিসে ঘটে ইতিহাসের দ্বিতীয় ভয়াবহ বন্যা। শহরের প্রায় ৮৫% এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়, জলস্তর ওঠে ১.৮৯ মিটার পর্যন্ত। এই বিপর্যয়ে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ঐতিহ্যবাহী সম্পদের মতো বইও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইতালির রিমিনি শহরের আলোকচিত্রী পাত্রিজিয়া জেলানো খবর পেয়ে ছুটে যান ভেনিসে। রাবারের বুট পায়ে তিনি ডুবে থাকা শহরের ভেতর দিয়ে হেঁটে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি থেকে প্রায় ৪০টি পুরোনো বই উদ্ধার করেন। বেশিরভাগ বই আর পড়া সম্ভব নয়, কিন্তু সেগুলোকে তিনি ক্যামেরায় বন্দি করেছেন যেন এক ধ্বংসের মধ্যেও প্রতিরোধ ও সংস্কৃতির টিকে থাকার প্রতীক।
জেলানো জানান, ভেজা ও নষ্ট হয়ে যাওয়া বইগুলো তাকে যেন পাথরে রূপ নেওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মতো মনে হয়েছে। কিছু বই হাতে ধরলেই ভেঙে পড়ছিল, আবার কিছু বইয়ের পাতায় অদ্ভুত নকশা তৈরি হয়েছিল, যা তাকে সমুদ্রের ঢেউ, হৃদয়ের আকার বা নতুন শব্দের মতো মনে করিয়েছে।
তিনি বলেন, “এই বইগুলো আসলে আমাদের সংস্কৃতি ও জ্ঞানের ভাণ্ডারের প্রতীক। ধ্বংস আছে, কিন্তু ছবির মাধ্যমে এক ধরনের নিরাময়ও আছে—আছে প্রতিরোধ।”
২০১৯ সালের মতো ভয়াবহ বন্যা ভবিষ্যতে আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর প্রায় ৬ মিলিমিটার বেড়ে যাচ্ছে এবং ভেনিস ভূমিধসের কারণে আরও নিচে বসে যাচ্ছে। শহরের ‘মোসে’ বাঁধব্যবস্থা কিছুটা রক্ষা দিচ্ছে, তবে সেটি পূর্ণ সমাধান নয়।
জেলানোর তোলা ছবিগুলো বর্তমানে টেকসই উন্নয়ন ও পরিবেশ সচেতনতার জন্য বিশ্বখ্যাত Prix Pictet ফটোগ্রাফি পুরস্কারের প্রদর্শনীতে জায়গা পেয়েছে। আসছে মাসগুলোতে লন্ডন, দুবাই ও টোকিওতে এসব ছবি প্রদর্শিত হবে।

