logo
ads

সাতক্ষীরায় নদীর কান্নায় হৃদয় ভারাক্রান্ত, দখল মুক্তের হুংকার

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

প্রকাশকাল: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৪১ পি.এম
সাতক্ষীরায় নদীর কান্নায় হৃদয় ভারাক্রান্ত, দখল মুক্তের হুংকার

নিজস্ব

নদী, আমাদের মায়ের মতো, যিনি প্রাণ দেন, জীবন রক্ষা করেন। কিন্তু সেই মায়ের বুক আজ দখলদারদের কালো হাতে বন্দি! বিশ্ব নদী দিবসে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নদী ও খালকে বাঁচানোর জন্য এক হৃদয়বিদারক আকুতি উঠেছে। নদী দখল ও ইজারা মুক্ত করার দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশ আর প্রাণবন্ত র‌্যালি এই দিনকে অমর করে রেখেছে। পরিবেশের কান্না থামাতে, জীববৈচিত্র্যের হৃৎস্পন্দন বাঁচাতে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা একযোগে হুংকার ছেড়েছেন—নদীকে মুক্ত করো, এখনই দখলদারদের উচ্ছেদ করো!

যুব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও’র আয়োজনে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাব চত্বর থেকে একটি প্রাণবন্ত র‌্যালি শুরু হয়। যেন নদীর প্রবাহের মতোই, মানুষের ঢল রাস্তায় নেমে আসে, হাতে হাত ধরে। র‌্যালি শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে গড়ে ওঠে এক ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন—যেন একটি নিঃশব্দ কান্না, নদীর জন্য, প্রকৃতির জন্য। সিডিও ইয়ুথ টিমের সিনিয়র ভলেন্টিয়ার হাফিজুর রহমান হাফিজ ও আনিসুর রহমান মিলনের সঞ্চালনায় এবং শ্যামনগর আতরজান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহীর সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে নদীর প্রতি ভালোবাসা আর ক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে।  
বক্তারা ছিলেন নদীর জন্য যোদ্ধা। শ্যামনগর আতরজান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক মানবেন্দ্র দেবনাথ, শিক্ষক ও সাংবাদিক রনজিৎ বর্মণ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইদ, আনিসুজ্জামান সুমন, জিএম মোহাম্মদ আলী, সিএনআরএস-এর ফিল্ড ফ্যাসিলেটেটর মায়া রানী, সিডিও ইয়ুথ টিম ভূরুলিয়া ইউনিটের টিম লিডার রাজা হোসেন রাজা, কৈখালী ইউনিটের টিম লিডার মনি—এবং আরও অনেকে। তাঁদের কণ্ঠে ছিল নদীর জন্য ব্যথা, প্রকৃতির জন্য উৎকণ্ঠা।  

নদীকে আমরা মা বলি, কিন্তু সেই মায়ের বুক আজ ভরাট হয়ে গেছে অবৈধ স্থাপনায়। আদি যমুনা নদী, যে একদিন জীবনের গান গাইত, আজ মৃতপ্রায়। তার নাব্যতা হারিয়ে গেছে, তার বুকে এখন বর্জ্যের পাহাড়। মাদার নদীকে চেনা যায় না আর, যেন তার মুখ ঢেকে দেওয়া হয়েছে দখলদারদের কালো ছায়ায়। বক্তারা বলেন, “নদী আমাদের জীবনের ধমনী, কিন্তু সেই ধমনী আজ বন্ধ হয়ে আসছে। দখল, দূষণ আর অব্যবস্থাপনা নদীকে শ্বাসরুদ্ধ করে দিচ্ছে।”  

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিডিও ইয়ুথ টিমের মুন্সিগঞ্জ ইউনিটের টিম লিডার মাফিজুর রহমান, সদর ইউনিটের নূর নাহার পারভীন নুহা, আটুলিয়া ইউনিটের রনী হোসেন, নূরনগর ইউনিটের অরুপ দেবনাথ, আলোর পথে সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রতিমা রানী। তাঁরা সবাই একটি স্বপ্ন দেখেন—নদী আবার গান গাইবে, তার প্রবাহে ফিরবে প্রাণ। সিএনআরএস-এর বাস্তবায়নে এবং সুইডিশ দূতাবাসের সহযোগিতায় এই আন্দোলন যেন একটি জাগরণের সূচনা।  

নদী শুধু জলের ধারা নয়, এ যেন আমাদের শিরায়-শিরায় বয়ে চলা জীবন। বক্তারা বলেন, “নদী মরে গেলে আমরাও মরব। তার প্রবাহ বন্ধ হলে আমাদের হৃৎস্পন্দনও থেমে যাবে।” দখলদারদের অবৈধ স্থাপনা, দূষণের বিষাক্ত ছোবল—এসব নদীর শ্বাস কেড়ে নিচ্ছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য আজ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। তাই এই হুংকার, এই আকুতি—নদীকে বাঁচাও, আমাদের ভবিষ্যৎকে বাঁচাও!  

নদীর জন্য এই লড়াই শুধু একটি দিনের নয়, এ যেন একটি প্রতিজ্ঞা—যতক্ষণ না নদী মুক্ত হয়, আমাদের সংগ্রাম থামবে না। নদীর কান্না থামাতে, তার হাসি ফিরিয়ে আনতে, আমরা সবাই এক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ