logo
ads

পাখির সুরক্ষায় গুলির ছ্যাঁচা: নাটোরের লালপুরে রিপনের রক্তাক্ত লড়াই

অমর ডি কস্তা, নাটোর থেকে

প্রকাশকাল: ৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২১ পি.এম
পাখির সুরক্ষায় গুলির ছ্যাঁচা: নাটোরের লালপুরে রিপনের রক্তাক্ত লড়াই

নিজস্ব

নাটোরের লালপুরের কলসনগর এলাকায়, যেখানে সকালের নরম আলোয় পাখিরা গান গাইত, সেখানে আজ নেমে এলো গুলির ধাতব গর্জন—পাখিপ্রেমী রিপন কাজী (৩৫)-এর পেটে এয়ারগানের গুলি বিঁধিয়ে যায় শিকারিদের ক্রোধে। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে, যখন রিপন তার বাড়ির সামনে শিকারিদের নিষেধ করেন—যেন একটা নিরীহ প্রতিবাদ হয়ে দাঁড়ায় তার জীবনের সবচেয়ে কালো মুহূর্ত। আহত রিপন, যিনি কলসনগরের স্থানীয় বাসিন্দা, তার চিৎকারে ছুটে আসা লোকজনের হাতে উদ্ধার হয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, পেটের চামড়ায় গুলি আটকে আছে—উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এই ঘটনা শুধু রিপনের কষ্ট নয়, এ তো পাখির সুরক্ষার নামে মানুষের রক্তপাতের এক নির্মম সত্য—যা নাটোরের গ্রামীণ জীবনকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভবানীপুর গ্রামের জাহিদ হাসান (২৫), সামাউন কাজী (৩০) ও আশরাফুল ইসলাম (৩২)—এই তিন যুবক রিপনের বাড়ির সামনে এয়ারগান হাতে পাখি শিকার করছিলেন। রিপন তাদের নিষেধ করলে কথা-কাটাকাটির মধ্যে জাহিদ তার অস্ত্র ছুড়ে দেয়—পেটে গুলি বিঁধিয়ে রিপনকে মাটিতে ফেলে দেয়। এই দৃশ্য যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে: পাখিরা উড়ে যাচ্ছে ভয়ে, আর একজন মানুষের রক্ত মাটিতে মিশে যাচ্ছে প্রকৃতির নামে। স্থানীয় লোকজন রিপনকে উদ্ধার করার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে শিকারিদের গণপিটুনি দিয়ে আটক করে থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ তাড়াতাড়ি পৌঁছে তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও এয়ারগান জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়—যেন এই আটক হয়ে উঠেছে পাখিপ্রেমীদের জয়ের প্রথম ধাপ।

লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলছেন, "খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনকে আটক করেছি। রিপনের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।" এই ঘটনা নাটোরের লালপুরে শুধু স্থানীয় খবর নয়, এ তো বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় পাখি শিকারের অস্বাস্থ্যকর প্রবণতার এক কালো দাগ—যেখানে এয়ারগানের ছোবল যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে, আর প্রকৃতির রক্ষকরা হয়ে উঠছেন শিকার। স্থানীয়রা বলছেন, এমন ঘটনা বাড়ছে, কিন্তু পুলিশের কঠোরতা দরকার—যাতে পাখির গান আর নীরব না হয়।

রিপনের এই আহত অবস্থা যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে মানুষের জীবন কত সহজে বিপন্ন হয়। আশা করি, রিপন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন, আর শিকারিরা বিচারের মুখোমুখি হবে—যাতে লালপুরের আকাশে আবার পাখির স্বাধীন গান বাজে। কারণ, পাখিরা তো আমাদের সকলের—তাদের সুরক্ষায় একটু সচেতনতা যোগ করলে জীবনের মেলা আরও রঙিন হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ