logo
ads

সবজির রাজ্যে চাষিদের স্বপ্ন ভেঙেছে টানাবৃষ্টি

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশকাল: ৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৬ এ.এম
সবজির রাজ্যে চাষিদের স্বপ্ন ভেঙেছে টানাবৃষ্টি

নিজস্ব

সবজির রাজ্য হিসেবে পরিচিত যশোরে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে চাষিদের স্বপ্ন ভেঙেছে—যেন একটা অদৃশ্য হাতে মাটির রঙিন আশা ধুয়ে ফেলেছে। চলতি মৌসুমে অগ্রিম শীতকালীন সবজি ক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির মুখে চাষিরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন, যেখানে প্রতিটা ফোঁটা জল একটা অপূরণীয় ক্ষতের মতো লাগছে।

জানা গেছে, এবার যশোরে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে অগ্রিম শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে। আবাদকৃত সবজির মধ্যে সীম, পটল, বেগুন, করলা, ঝিঙে, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, লালশাক, ডাটাশাক, কাঁচা মরিচ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু গত দেড় মাসের অব্যাহত বৃষ্টিপাতে চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—যেন বর্ষার ধারা চাষিদের পরিশ্রমের স্মৃতিগুলোকে নীরবে গ্রাস করে নিচ্ছে।

যশোরের চৌগাছা সড়কের আব্দুলপুর গ্রামে রাস্তার দুপাশে শত শত পলিথিনে ঢাকা সবজির বীজতলা দেখা যায়—যেন এই ঢাকনিগুলো একটা নীরব কান্নার প্রতীক, যা বৃষ্টির অত্যাচারে আশা রক্ষা করার ব্যর্থ চেষ্টা। প্রতিবছর আষাঢ় থেকে ৬৪ কৃষক বিশেষ ব্যবস্থায় বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করেন। কিন্তু গত জুলাই থেকে ধারাবাহিক বৃষ্টিতে ৭০০ হেক্টর চারা উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যশোর সদরের চুড়ামনকাটি এলাকার সবজি চাষি শহিদুল ইসলাম, আশাদুল ইসলাম ও শামীম হোসেন জানান, দুই বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন সবজিতে ক্ষতির মুখে আছি। এবার বৃষ্টিপাত আরও বেশি। শিম, পটল, বেগুন, লালশাক নষ্ট হয়ে গেছে।

হৈবতপুরের সবজি চাষি রওশন আলী, মিজানুর, জয়নাল, হাফিজুর রহমানসহ অনেকে বলেন, ভারি বৃষ্টি তাদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। শিম, পটল, করলা, বেগুনগাছে পচন ধরে শুকিয়ে গেছে। আবাদের খরচ উঠবে কিনা সন্দেহ। নতুন চাষ করতে পারেনি অনেকে। ফলে চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত—যেন এই ক্ষতি একটা নীরব ঝড়, যা পরিবারের প্রতিটা কোণে ছড়িয়ে পড়ছে।

কাশিমপুরের দৌলতদিহি গ্রামের চাষি জামাল উদ্দিন জানান, এবারের বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ সবজি ক্ষেত নষ্ট। তার মতো বহু চাষি ক্ষতিগ্রস্ত। রিপন হোসেন বলেন, আগাম ওদের শীতকালীন সবজি চাষ ব্যাহত হয়েছে। ফলে সবজি বাজারে দেরি, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ পরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন জানান, এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক বৃষ্টিতে সবজি ও বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন।

যেন একটা সবুজ ক্যানভাসে বর্ষার অন্ধকার ছায়া পড়ে গেছে—যশোরের মাটি, যা সারা বছর চাষিদের হাতে রঙিন হয়ে ওঠে, এবার নির্মম জলে ধুয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষতি শুধু ফসলের নয়, একটা চক্রের—যেখানে পরিশ্রমের বিনিময়ে আশা ফুটে ওঠে, কিন্তু এবার সেই আশা বৃষ্টির ধারায় মিশে যাচ্ছে। জলবায়ু এই নির্দয় খেলায় আমাদের সকলকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, মাটির সঙ্গে লড়াইয়ে সাহায্যের হাত বাড়ানো দরকার—ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে, সচেতনতার আলোয়। এই চাষিরা, যাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে দেশের শক্তির মূল, আবার উঠে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস হয়, কারণ তাদের মতো ধৈর্যের গভীরতা আর কোথাও নেই।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ