সন্ধ্যার কমলা আলোয় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রধান ফটক যেন এক জাদুময় মঞ্চে রূপান্তরিত হলো। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় জাগো ফাউন্ডেশনের “ভয়েসেস অব ক্লাইম্যাট: আওয়ার ক্লাইম্যাট, আওয়ার ফিউচার” ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ‘টঙের গান’ সংগঠনের আয়োজনে এক প্রাণবন্ত ফ্ল্যাশমব জলবায়ু পরিবর্তনের স্থানীয় কষ্ট ও আশার কণ্ঠকে জীবন্ত করে তুলল। শতাধিক তরুণ, হাতে রঙিন প্ল্যাকার্ড, মুখে জোরালো স্লোগান আর হৃদয়ে পরিবর্তনের অদম্য ইচ্ছা নিয়ে একত্রিত হলো। নৃত্য, নাটক, আর গানের সমন্বয়ে তাদের পরিবেশনা ছিল এক উদ্দীপ্ত বার্তা—বাংলাদেশের উপকূলীয় ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অব্যক্ত কষ্ট বৈশ্বিক মঞ্চে তুলে ধরার প্রতিজ্ঞা। এই আয়োজন কেবল প্রতিবাদ নয়, একটি সম্মিলিত স্বপ্নের উদযাপন, যা কপ-৩০ সম্মেলনে বাংলাদেশের তরুণদের কণ্ঠকে পৌঁছে দেবে।
একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “আমাদের নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ভবিষ্যৎ বাঁচাও!” আরেকটিতে, “জলবায়ু ন্যায় চাই, এখনই!” তরুণরা তাদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতা তুলে ধরল—উপকূলের লবণাক্ততা, বন্যার তাণ্ডব, আর কৃষকের নিঃশেষ ফসলের গল্প। একটি নাট্য পরিবেশনায় তারা দেখাল, কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তন গ্রামীণ জীবনকে গ্রাস করছে, তবু আশার আলো জ্বালাতে তরুণরা প্রস্তুত। দর্শকদের মাঝে ছিল বিস্ময় আর সংহতি; রাস্তার পথচারী থেকে শিক্ষার্থী, সবাই যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল। ‘টঙের গান’-এর সভাপতি মাহমুদুল হাসান আবিরের কণ্ঠে উঠল আকুতি, “আমাদের গ্রামের মানুষের গল্প বিশ্ব শুনুক, আমাদের বার্তা কপ-৩০-এ পৌঁছুক।”
জাগো ফাউন্ডেশনের এই ক্যাম্পেইন দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি যুব সংগঠনের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেছে। ফ্ল্যাশমব ছাড়াও, ১১২টির বেশি শিক্ষামূলক ভিডিও তৈরি হচ্ছে, যা জলবায়ু সংকটের প্রতি সচেতনতা ছড়াচ্ছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো ‘ক্লাইম্যাট ক্যাপস্যুল’—তরুণদের সম্মিলিত দাবির একটি প্রতীকী সংকলন, যা বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ব্রাজিলে কপ-৩০-এ বিশ্ব নেতাদের কাছে পৌঁছে দেবে। এই ক্যাপস্যুলে লুকিয়ে আছে উপকূলের মানুষের নীরব কান্না, কৃষকের হতাশা, আর তরুণদের অটল সংকল্প।
‘Gildan’ এবং ‘অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ’-এর সহযোগিতায় এই উদ্যোগ যেন একটি আলোকবর্তিকা। তরুণদের এই সৃজনশীল প্রতিবাদ শুধু স্থানীয় নয়, বৈশ্বিক পরিবর্তনের বীজ বপন করছে। ফ্ল্যাশমবের শেষে, যখন তরুণরা হাত ধরে একটি মানবশৃঙ্খল গঠন করল, তখন বাতাসে ভেসে এলো একটি অঘোষিত প্রতিজ্ঞা—জলবায়ু ন্যায়ের লড়াইয়ে তারা থামবে না। এই আন্দোলন বাংলাদেশের পরিবেশ আন্দোলনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে তরুণদের কণ্ঠই হচ্ছে পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শক্তি।

